দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে যুবলীগের যে তিন নেতা-কর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে, তাদের দুদিন আগে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নাটোরের নেতারা।
Published : 05 Dec 2016, 09:19 PM
সোমবার সকালে দিনাজপুরে লাশ উদ্ধারের পর দুপুরে নাটোর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব সংগঠনটির নেতারা।
নাটোর জেলা, সদর উপজেলা ও পৌর যুবলীগের ওই সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলা হলেও কাউকে সন্দেহের কথা জানানো হয়নি।
নাটোর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক সাঈম হোসেন বলেন, “আমরা বলতে পারছি না কারা কেন আমাদের নেতা-কর্মীদের অপহরণ করে হত্যা করেছে।”
সকালে ঘোড়াঘাট উপজেলায় মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই তিনজনের লাশ পাওয়ার কথা জানায় দিনাজপুর পুলিশ।
নিহতরা হলেন- নাটোর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, সদর উপজেলার কানাইখালির সোনা মিয়ার ছেলে রেদোয়ান সাব্বির (৩০), সদর উপজেলার তালতলা হাফরাস্তার কালু মিয়ার ছেলে যুবলীগকর্মী সোহেল রানা (২৪) এবং কানাইখালির লুৎফর রহমান মওলানার ছেলে যুবলীগকর্মী আব্দুল্লাহ (২৫)।
ঘোড়াঘাট থানার ওসি ইসরাফিল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল ১০টার দিকে বুলাকিপুর ইউনিয়নের ভেলাই গ্রাম রঘুনাথপুর কলাপাড়া দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন সড়কের পাশে আম বাগানের ভিতরে একটি পুকুর পাড়ে লাশ তিনটি পাওয়া যায়।
“দুই যুবকের মাথা ও কপালে এবং এক যুবকের কপালে গুলির চিহ্ন রয়েছে।”
দিনাজপুর পুলিশ জানায় লাশের সঙ্গে চারটি মোবাইল ফোন ছিল। এর মধ্যে তিনটি পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা ছিল।
সংগঠনের নেতা-কর্মী খুনের খবর জানার পর দুপুরে নাটোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জেলা, সদর উপজেলা ও পৌর যুবলীগ নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন। উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক সাঈম হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুল হাসান।
রুহুল আমীন বলেন, রেদোয়ান, আব্দুল্লাহ ও সোহেলকে শনিবার রাত ১১টার দিকে নাটোর সদর উপজেলার তোকিয়া বাজারের একটি চায়ের দোকান থেকে ১৫/১৬ জন দুষ্কৃতকারী জোর করে দুটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
“এরপর থেকে তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সাব্বিরের মা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন।”
সোমবার সকালে গণমাধ্যমে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকায় তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়ার খবর পেয়ে তারা যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন যে ওই লাশ নিখোঁজ যুবলীগ নেতা-কর্মীদের।
রুহুল আমীন একে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করে দায়ীদের খুঁজে বের করার দাবি জানান।
পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক সাঈম বলেন, “এটা বের করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আমাদের দাবি, তারা এটা দ্রুততার সঙ্গে করবেন। সরকারের কাছেও আমাদের দাবি এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।”
নাটোর সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, মামলা হলে তারা অবশ্যই ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবেন।
নিহত যুবলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সদর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান।
যুবলীগ নেতা সাঈম বলেন, সবাই সব মামলায় জামিনে ছিলেন। রেদোয়ান সাব্বির গত বৃহস্পতিবার তার মাধ্যমে আদালতের একটি মামলায় জামিন নিয়েছেন।
নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা কেউ এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
শুধু আব্দুল্লাহর মামা তার ভাগ্নেকে ‘ভালো ছেলে’ উল্লেখ করে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
তিন যুবলীগ নেতাকর্মীর লাশ নেওয়ার জন্য দিনাজপুরে গেছেন তার স্বজনরা।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তাদের নাটোরে নিয়ে আসা হচ্ছে। মঙ্গলবার জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হবে।