ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Published : 03 Nov 2016, 12:07 PM
উপজেলার চাপরতলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মহিউদ্দিন আহমেদ বেলালকে (৩০) বৃহস্পতিবার ভোরে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন।
এ নিয়ে এ ঘটনায় মোট ১০ জন গ্রেপ্তার হলেন।
ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে রোববার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত নাসিরনগরে ১৫টি মন্দিরসহ হিন্দুদের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
ঘটনার পর রাতে নয়জনকে আটকের পর দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল করিম।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন, “ভাঙচুর ও লুটপাটের সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ দেখে মহিউদ্দিনকে শনাক্ত করা হয়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেলালকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।”
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গঠন করা তদন্ত দল বৃহস্পতিবার সকালে নাসিরনগরে এসে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত দলের নেতৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শাখাওয়াত হোসেন।
ঘটনার পর জেলা পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোট তিনটি কমিটি গঠিত হয়। দায়ের করা হয় দুটি মামলা, যার প্রত্যেকটিতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ১০০০ থেকে ১২০০ জনকে। এছাড়া প্রত্যাহার করা হয়েছে নাসিরনগর থানার ওসি আবদুল কাদেরকে।
শুক্রবার নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসের ফেইসবুক পাতায় একটি পোস্ট নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত বলে স্থানীয়রা জানান।
ফেইসবুকে রসরাজ ‘ইসলাম অবমাননা করে’ পোস্ট দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ তাকে শনিবার আটক করে। পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই ঘটনা নিয়ে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ ব্যানারে রোববার বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয় নাসিরনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে। হবিগঞ্জের মাধবপুরেও ডাকা হয় একই কর্মসূচি।
রসরাজের শাস্তির দাবিতে একদল মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ দেখায়। আর কয়েকশ লোক সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেছিলেন, অবরোধ থেকে একদল লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে নাসিরনগর সদরের দত্তবাড়ির মন্দির, নমঃশূদ্রপাড়া মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, ঘোষপাড়া মন্দির, গৌরমন্দির গুঁড়িয়ে দেয়।
পূজা উদযাপন পরিষদের নাসিরনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হরিপদ পোদ্দার বলেছিলেন, মন্দিরের পাশাপাশি দেড়শর বেশি বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
এ সময় কয়েকজন পূজারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন বলে জানান হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপজেলা সভাপতি আদেশ দেব।
এ বছরের শুরুতেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের তাণ্ডবে সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।