কাছাকাছি সময়ে একই উপজেলার কবুরহাটে বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরের, আহত হয়েছে আরও একজন।
সদর মডেল থানার ওসি শাহবুদ্দিন চৌধুরী জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বটতৈল ইউনিয়নের শিশিরপাড়া মাঠ এলাকায় হামলার শিকার হন হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক মীর সানোয়ার রহমান ও তার বন্ধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুজ্জামান।
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঞ্জুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সানোয়ার ও সাইফুজ্জামানের মধ্যে বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। সানোয়ার বাউল মতের অনুসারী ছিলেন। তার সঙ্গে সাইফুজ্জামানও প্রায়ই বাউল গানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতেন।
আহত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুজ্জামান
ওসি জানান, ৫৫ বছর বয়সী সানোয়ারের বাসা কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব মজমপুরে। শিশিরপাড়া মাঠ এলাকায় এক বাংলো বাড়িতে প্রতি শুক্রবার গরীব রোগীদের বিনা খরচে চিকিৎসা দিতেন তিনি।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, সানোয়ার ও সাইফুজ্জামান সকালে মোটরসাইকেলে করে শিশিরপাড়ার ওই বাড়িতে যাওয়ার সময় রাস্তার ওপরেই আক্রান্ত হন। একটি মটরসাইকেলে করে আসা তিন হামলাকারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে সানোয়ারকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এ সময় সাইফুজ্জামান বাধা দিতে গেলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে হামলাকারীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সহকর্মীরা জানান, কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুরের এক বাসায় ভাড়া থাকতেন সাইফুজ্জামান। তিনি লেখাপড়া করেছেন বিশ্বভারতীতে।
সহকারী অধ্যাপক মঞ্জুর রহমান জানান, সাইফুজ্জামানের মাথা ও শরীরের উপরের অংশে ধারালো অস্ত্রের সাতটি আঘাত করা হয়েছে।
স্থানীয়রা পুলিশকে বলেছেন, সানোয়ারের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হলে হামলাকারীরা নিজেদের মোটরসাইকেলে করেই চলে যায়।
এদিকে বটতৈলের ঘটনার আধা ঘণ্টার মাথায় কবুরহাট বাজারে বোমা বিস্ফোরণে নাঈম হোসেন নয়ন (১৫) নামের এক কিশোর নিহত হয়। আহত হয় তার সঙ্গে থাকা হাফিজুর রহমান (১৫)।
তারা ক্রিকেট খেলতে গিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া বোমার শিকার হয়েছে বলে প্রথমে স্থানীয়দের কাছে শোনা গেলেও পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, নাঈম নিজেই ওই বোমা বহন করছিল।
ওসি শাহবুদ্দিন চৌধুরী জানান, সকাল ১০টার দিকে নাঈম ও হাফিজ কবুরহাট বাজারে পৌঁছালে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই নাঈমের মৃত্যু হয়।
পরে স্থানীয়রা হাফিজকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠায়।
ওসি বলেন, বিস্ফোরণে নাঈমের পেটের একটি অংশ উড়ে গেছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, সে নিজেই ওই বোমা বহন করছিল।
“হাফিজকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে আমরা আশা করছি।কোথা থেকে এবং কী কারণে বোমা আনা হচ্ছিল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আদৌ সেটা কুড়িয়ে আনা, নাকি কোনো কোনো কারণে বহণ করা হচ্ছিল- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
নিহত নাঈম কবুরহাট সর্দার পাড়ার তাম্বার হোসেন সর্দারের ছেলে। সে ও হাফিজ কবুরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত। হাফিজ একই গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে।
কুষ্টিয়া হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, আহত হাফিজের অবস্থায় আশঙ্কাজনক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নাল আবেদীন বলেন, “আমরা সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়েই তদন্ত শুরু করেছি। এ মুহূর্তে বিস্তারিত বলা যাবে না।”
এই কুষ্টিয়া থেকেই গত ১৫ মে শরিফুল ইসলাম ওরফে শিহাব নামে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সন্দেহভাজন এক সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, যাকে ঢাকার জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) কুষ্টিয়া অঞ্চলের প্রধানসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় গোয়েন্দা পুলিশ।
কুষ্টিয়ার পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গায় গতবছর ১০ ডিসেম্বর খুন হন স্থানীয় একটি বাউল উৎসবের আয়োজক জাকারিয়া সরদার।তাকেও একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
তার আগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলনকে। তিনিও একজন লালন ভক্ত ছিলেন।