কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের আনসার ব্যারাকে হামলার সময় অস্ত্র লুটে বাধা দিতে গিয়েই ওই ব্যারাক কমান্ডার আলী হোসেন গুলিতে নিহত হন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী এক আনসার সদস্য।
Published : 13 May 2016, 08:36 PM
শুক্রবার ভোররাতে টেকনাফের হ্নীলার মোচনী এলাকার ওই আনসার ব্যারাকে হামলা চালিয়ে লুট করা হয় ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬৭০টি গুলি।
এতে ব্যারাক কমান্ডার আলী হোসেন নিহত হওয়া ছাড়া আরও তিন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাতের পালায় ব্যারাকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য অজিত বড়ুয়া জানান, হামলায় অংশ নেয় ৩০ থেকে ৩৫ জন। তাদের মুখ ছিল হেলমেট ও মুখোশে ঢাকা; অধিকাংশের পরনে ছিল হাফ প্যান্ট।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে হামলা ঘটনার বর্ণনা দেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এই আনসার সদস্য।
অজিত জানান, আনসার সদস্যদের ব্যারাকটি শরণার্থী শিবিরের পশ্চিম দিকের শেষ প্রান্তে; ব্যারাকের পিছনে বিশাল পাহাড়।
অজিতের ভাষ্য, ভোররাত ৩টার দিকে সশস্ত্র একদল লোক কিছু বুঝে ওঠার আগেই অস্ত্রের মুখে তাকে জিন্মি করে ফেলে। এরপর ৪/৫ জন তাকে ঘিরে রাখে। হামলাকারীদের কয়েকজন ব্যারাকে ঢুকে ঘুমন্ত আনসার সদস্যদেরও অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে।
এক পর্যায়ে তারা ব্যারাক কমান্ডার আলী হোসেনের কাছে অস্ত্রাগারের চাবি চাইলে তিনি বাধা দিতে চেষ্টা করেন বলে জানান অজিত।
“হামলাকারীদের সশস্ত্র একটি দল তখন তাকে বাইরে নিয়ে গুলি করে। আরেকটি দল অস্ত্রাগারে ঢুকে অস্ত্র ও গুলি নিয়ে চলে যায়।”
সশস্ত্র হামলাকারীদের গুলিতেই আনসার কমান্ডার আলী হোসেন নিহত হয়েছেন বলে জানান ওই ব্যারাকের সেকেন্ড-ইন কমান্ড আলমগীর হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আলী হোসেনকে উদ্ধার করে শরণার্থী শিবিরের হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে শরণার্থী শিবিরের আনসার ব্যারাকে সশস্ত্র হামলা ও লুটপাটের খবরে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, আনসার ও ভিডিপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ডার নির্মলেন্দু বিশ্বাস সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের পশ্চিম দিকের পাহাড়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের আস্তানা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পাহাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।”
জড়িতদের গ্রেপ্তার ও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ‘প্রয়োজনে’ ওই পাহাড়ে ‘অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প’ বসানো হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ডাকাত দল ছাড়াও রোহিঙ্গা অপরাধীদের সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা হামলা ও অস্ত্র লুটে জড়িত কি না সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান আনসার ও ভিডিপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ডার নির্মলেন্দু বিশ্বাস।
তিনি বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত হামলা ও লুটপাটের ঘটনা।”
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, কে বা কারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত তা খুঁজে বের করতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এ নিয়ে শুক্রবার দুপুরে টেকনাফে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক।