রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস হত্যা মামলার পুনর্বিচারে দুই জেএমবি সদস্যের সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
Published : 24 Feb 2016, 02:55 PM
এ আদালতের পিপি এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ইউনুস হত্যা মামলায় ২০১০ সালে দুই জেএমবি সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেয় রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত। আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করলে মৃত্যুদণ্ডের রায় স্থগিত করে পুনঃবিচারের আদেশ হয়।
“পুনঃবিচারে দুই আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।”
দুই আসামি সফিউল্লাহ ও শহীদুল্লাহ বর্তমানে রাজশাহী জেলা কারাগারে রয়েছেন। এদের মধ্যে শহীদুল্লাহ ওরফে মাহবুব মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জেএমবির শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের বড় ভাই রফিকুল ইসলামের জামাতা। তার বাড়ি নওগাঁ সদর থানার সারকডাঙ্গা গ্রামে। আর সফিউল্লাহ ওরফে তারেকের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ইটাগাছা গ্রামে।
২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিনোদপুর এলাকায় প্রাতভ্রমণের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
অধ্যাপক ইউনুস বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহ-সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন তার ছোট ভাই আবদুল হালিম মতিহার থানায় মামলা করেন। কয়েক দফা তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের ৩৩ মাস পর ২০০৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জেএমবির আট জঙ্গির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।
২০০৬ সালের ১৩ এপ্রিল গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেএমবি জঙ্গি শফিউল্লাহ জবানবন্দিতে বলেছিলেন, তাদের নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের নির্দেশেই অধ্যাপক ইউনুসকে হত্যা করা হয়। পরে বগুড়া থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে শহীদুল্লাহকে।
২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট মামলাটি রাজশাহীর বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়। পরের বছর ২৮ জানুয়ারি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ দুই আসামির ফাঁসির রায় দেন।
আট আসামির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সাবেক ছাত্র জামালপুর জেলার শেখেরভিটা এলাকার গোলামুর রহমান ওরফে গোলাম মোস্তফা, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার আবু ইছা ওরফে এনামুল, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসার আবুল মতিন ওরফে বোমারু মতিন ওরফে ইসমাইল, তক্তপাড়ার জাকির ওরফে জায়েদ ওরফে জাহিদ, চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সন্নাসীকুপ গ্রামের আবুল কাশেম ওরফে তুফান ও দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার নীরকণ্ঠপুর গ্রামের আবদুর রহমান ওরফে আরিফ ওরফে ফাহাদ ওরফে আলালকে খালাস দেওয়া হয় ওই রায়ে।
বিচারক রায়ে বলেন, শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে অধ্যাপক ইউনুসকে হত্যা করা হয়। মামলার চাক্ষুস কোনো সাক্ষী না থাকলেও দুই আসামির জবানবন্দিতে প্রমাণিত হয়েছে তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত।
আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গেলে হাই কোর্ট মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।