দিনাজপুরের কাহারোলে ইসকন মন্দিরে হামলা মামলার আসামি শরিফুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত।
Published : 12 Dec 2015, 08:35 PM
শনিবার দিনাজপুরের অতিরিক্ত বিচারিক হাকিম আহসানুল হক এ আদেশ দেন।
এদিকে এ ঘটনায় গাইবান্ধা থেকে শরীফুলের বাবাসহ আরও পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ইসকন মন্দিরে হামলার ঘটনায় শুক্রবার রাতে কাহারোল থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছেন ওই মন্দিরের পুরোহিত গোবর্ধন হরিদাস।
মামলার দুই আসামি হলেন ঘটনার পরপরই আটক শরিফুল ইসলাম ও শুক্রবার বীরগঞ্জে এসএমজি ও গুলিসহ আটক মোসাব্বির আলম খন্দকার। বাকি চরজনকে অজ্ঞাত উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাহারোল থানার উপ-পরিদর্শক তাজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আদালতে সাত দিনের হেফাজতের (রিমান্ড) আবেদন করলে আদালত ৩ দিন মঞ্জুর করে।
এছাড়া মামলার অপর আসামি মোসাব্বের আলম জনতার প্রহারে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকার কারনে তার বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
গাইবান্ধায় পাঁচজন আটক
ইসকন মন্দিরে হামলার মামলার আসামি শরিফুল ইসলামের বাবা সাখাওয়াত হোসেন ওরফে খোকা মিয়াসহ (৬০) পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার গভীর রাতে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর গ্রাম থেকে আটক অন্যরা হলেন একই গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী আবু জাফর মন্ডল ইকবাল (৪৯), তার তিন ছেলে ফরহাদ মিয়া (২৫), ফুয়াদ মিয়া (২০) ও সিহাব মিয়া (১৮)।
পলাশবাড়ী থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটক করা হয়েছে। তাদের থানায় জিঞ্জাসাবাদ করা হচ্ছে।
“আটক মনোহরপুর কমিউনিটি হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী আবু জাফর মন্ডলের বাড়ি থেকে কিছু জিহাদি বই ও সরকারি ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে।”
তবে শরিফুল ইসলামের নামে এই থানায় কোনো মামলা নেই বলে জানান তিনি।
গাইবান্ধা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মনোহরপুর গ্রাম। শনিবার বিকালে ওই গ্রামে শরিফুলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় তার মা সালেহা বেগম ছেলে ও স্বামী আটকের পর মুষড়ে পড়েছেন।
সালেহা বেগম বিডিনিউজ টোয়ন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ও মেঝো ছেলে আনারুল ইসলাম ওরফে রানা মিয়া ১৯৯০ সাল থেকে কানাডা প্রবাসী।
দুবছর থেকে সাখাওয়াত হোসেন গ্রামের বাড়িতে আছেন। বড় ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী সাহারুলও বাড়িতে থাকেন বলে তিনি জানান।
সালেহা বলেন, ছোট ছেলে শরিফুল ইসলাম ২০০২ সালে মনোহরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে ২০১১ সালে বগুড়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ ইন্সটিটিউট থেকে কম্পিউটার টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা করেন।
তারপর গত ৬/৭ মাস অগে ঢাকায় আরএফএল কোম্পানিতে চাকরি নেন। কিন্তু কী কারণে বা কবে ঢাকা থেকে দিনাজপুর গিয়েছেন সে বিষয়ে তারা কিছু জানেন না বলে জানান সালেহা।
স্থাণীয়রা জানান, প্রতিবেশী আবু জাফর ইকবালের তিন ছেলে শরিফুল ইসলামের বন্ধু। তার ছেলে ফরহাদ ঢাকায় পোশাক শিল্পে চাকরি করেন, ফুয়াদ ও শিহাব বাড়িতে থাকেন।
তাদেরও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়ে এলাকাবাসী কিছু জানাতে পারেননি।
মোসাব্বের ৭ মাস ধরে ‘নিখোঁজ’
ইসকন মন্দিরে হামলার পর আটক মোসাব্বের সাত মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন বলে তার পরিবার ও পুলিশ জানিয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের লালমনিরহাট প্রতিনিধি আনিসুর রহমান লাডলা জানান, মোসাব্বেরের পুরো নাম মোসাব্বের আলম খন্দকার। তিনি লালমনিরহাট সদরের খুটামারা (বানভাসা মোড়) গ্রামের বাসিন্দা সামসুল আলম খন্দকারের ছেলে। সামসুল আলম তহসিলদার পদে চাকরি করছেন। এক ভাই এক বোনের মধ্যে মোসাব্বের বড়। তিনি রংপুর পলিটেকনিকের ছাত্র।
লালমনিরহাট থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমান জানান, গত ২৭ জুন মোসাব্বেরের বাবা লালমনিহাট থানায় একটি জিডি করেন। জিডিতে মোসাব্বের চলতি বছরের ৭ মে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন বলে উল্লেখ করা হয়।
“এরপর ২১ জুলাই রংপুরের র্যাব-১৩ বরাবরও একটি আবেদন করেন ছেলের খোঁজে।”
এরপর অজ্ঞাত স্থান থেকে একাধিকবার ফোনে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগে গত ১৩ অগাস্ট সামসুল আলম দুই ব্যক্তিরে নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করেন বলে জানান এসআই সিদ্দিকুর।
সিদ্দিকুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও মোসাব্বেরকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ গ্রামে ইসকন মন্দিরে হামলা হয়। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হন।
হামলার পরদিন বীরগঞ্জ উপজেলায় সিংড়া ফরেস্ট এলাকায় স্থানীয়রা একটি এসএমজি ও ২৮ রাউন্ড গুলিসহ মোসাব্বেরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।