রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার জনকে আটক করেছে পুলিশ।
Published : 03 Oct 2015, 07:57 PM
এরা হলেন- কুনিওর বাড়িওয়ালা মুন্সীপাড়ার জাকারিয়া বালা (৫৮) ও তার শ্যালক হীরা (৪৮), রিকশাচালক মোন্নাফ আলী ও আলুটারি গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে মুরাদ হোসেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবার বিকেলে রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ার বাসা থেকে জাকারিয়াকে এবং নুরপুরের বাড়ি থেকে হীরাকে আটক করা হয়।”
শনিবার সকাল ১১টার দিকে রংপুর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মাহিগঞ্জের পাশের আলুটারি গ্রামে রিকশায় করে যাওয়ার সময় মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ৬৬ বছর বয়সী হোশি কুনিও।
ঘটনার পরপরই তাকে বহনকারী রিকশাচালক মোন্নাফ আলী ও ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির মুরাদ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এসপি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “হোশি কুনিও হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই চার জনকে থানায় নেওয়া হয়েছে।”
জাকারিয়া বালার দুই ভাই জাপানে থাকেন, যাদের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে বাংলাদেশে আসেন কুনিও। তিনি আলুটারি গ্রামে দুই একর জমি ইজারা নিয়ে ঘাসের আবাদ করছিলেন।
জাকারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নিজেও দীর্ঘদিন জাপানে ছিলাম। আমার পরিবারের অনেকে এখনও জাপানে থাকেন। সেই সূত্রে হোশি রংপুরে এসে আমার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তিনি একাই থাকতেন।
“এবার ১৪ মে হোশি কুনিও বাংলাদেশে আসেন। প্রতিদিনের মতো শনিবার সকালেও তিনি কাজে বের হন। পরে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই।”
কুনিওর খামারের পাশে হীরার একটি মাছের খামার রয়েছে। খামারে যাওয়ার সময় প্রতিদিন হীরাও তার সঙ্গে থাকতেন। কিন্তু শনিবার কুনিও একাই খামারের দিকে রওনা হন।
তার মৃত্যুকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে হীরা সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতিদিন তার সঙ্গে আমিও একই রিকশায় খামারে যেতাম। শনিবার জরুরি কাজ থাকায় হোশি একাই খামারে যান।”
এর আগে ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপার রিকশাচালককে উদ্ধৃত করে সাংবাদিকদের বলেন, সকালে তার রিকশায় করে মাহিগঞ্জ-হারাগাছা সড়ক থেকে কাঁচা রাস্তা ধরে ৫০০ গজ দূরে আলুটারি গ্রামের খামারের দিকে যাচ্ছিলেন হোশি কুনিও। মাঝ পথে মহিষওয়ালা মোড়ে একটি মোটরসাইকেলে এক মুখোশধারী বসা ছিল। আর সামনে থেকে আসে আরও দুজন মুখোশধারী।
“তারা কুনিওকে গুলি করে দ্রুত দৌড়ে মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যায়। পরে পাশের বাড়ি থেকে মুরাদ বের হয়ে কুনিওকে একটি অটোরিকশায় তুলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।”
কুনিওর সঙ্গে থাকা পাসপোর্টটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স ৬৬ বছর। তার ভিসার মেয়াদ রয়েছে ২০১৬ সালের ৩১ মে পর্যন্ত।
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাল্টিপল ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন কুনিও। একটি প্রজেক্ট তৈরি করে ফান্ড গঠনে সহায়তা করছিলেন তিনি।”
তিনি বলেন, গত ২৮ অগাস্ট সর্বশেষ বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নাগরিক। তবে তার অবস্থানের ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে কিছু জানানো হয়নি।
জাপানি এই নাগরিকের মৃতদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।