খাগড়াছড়ির ৪২ সেতুর উদ্বোধন সোমবার

সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পুরো শহর। বেইলি সেতুর পরির্বতে পাকা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় খুশি খাগড়াছড়ির বাসিন্দাও।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2022, 09:05 AM
Updated : 6 Nov 2022, 09:05 AM

পর্যটন নগরী খাগড়াছড়িতে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপদ করতে বেইলি সেতু ভেঙে ৪২টি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সোমবার সকাল ১০টায় একযোগে এসব সেতু উদ্বোধন করবেন বলে খাড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন।

খাগড়াছড়ির দুই পাশে পাহাড় তার মাঝখানে সড়ক। একটা সময় ঝুকিঁপূর্ণ বেইলি সেতু পাহাড়ি আকাবাঁকা সড়কের একমাত্র ভরসা ছিল। বেইলি সেতু পাতাটন খুলে নিচে পড়ে যেত বা সেতু ভেঙে চেঙ্গি, মাইনি নদী ও ছড়াতে গাড়ি পড়ে ঘটত দুর্ঘটনা। সম্প্রতি ৪২টি বেইলি সেতু ভেঙে সেখানে পাকা সেতু নির্মাণ করায় ‘নিরবিচ্ছিন্নভাবে’ সড়কে যানবাহন চলাচল করছে।

খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ জানায়, সেতুগুলোর মধ্যে সদরে ১০টি, পানছড়িতে ৯টি, দীঘিনালায় ৫টি, মহালছড়িতে ৫টি, মাটিরাঙায় ৩টি, গুইমারায় ১টি, রামগড়ে ৩টি, লক্ষ্মীছড়িতে ৫টি ও বাঘাইছড়িতে ১টি রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এসব সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পুরো শহর। বেইলি সেতুর পরির্বতে পাকা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় খুশি খাগড়াছড়ির বাসিন্দাও।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি সড়কে দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি চালান শাহ আলম ও মো. আলাল। পাকা সেতু হওয়ায় তারা এখন যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারছেন।

আলম ও মো. আলাল জানান, এই সড়কে নতুন চারটা পাকা সেতু হয়েছে। আগে বেইলি ছিল ভোগান্তির কারণ। এক সময় বেইলি ব্রিজের কারণে প্রায় দুর্ঘটনা হত। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। রোগীদের পরিবহনেও সমস্যা হত। পাকা সেতু হওয়ায় সঙ্কট দূর হয়েছে; স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারেন।

একই এলাকায় কথা হয় ওষুধ সরবরাহকারী গাড়ির চালক মো. আফজাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমাদের এখন দ্রুত সময়ে ওষুধ পৌছাতে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। বেইলি ব্রিজ থাকার সময় প্রায়ই ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। এখন সেই সমস্যা নেই।”

খাগড়াছড়ি ট্রাক-মিনি ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. জসীম বলেন ,“আগে বেইল ব্রিজ ভেঙে মালবাহী ট্রাক নদী বা খালে পড়ে যেত। সহজেই পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে; কমেছে দুর্ঘটনা।”

ছখাগড়াছড়ি শান্তি পরিবহন মালিক গ্রুপের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান খলিল বলেন, “৪২টি পাকা সেতু নির্মিত হওয়ায় আমাদের যাতায়াতের ভোগান্তি দূর হয়েছে। এখন পাহাড়ের রাস্তাগুলো প্রশস্ত করলে সড়ক যোগাযোগ আরো মৃসণ হবে।”

এদিকে সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অন্তত ১০ হাজার মানুষের জমায়েত হবে বলে ধারণা জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্রের। তিনি বলেন, “সোমবার সারাদেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সড়ক বিভাগ কর্তৃক নির্মিত ১০০ সেতু উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে খাগড়াছড়ির রয়েছে ৪২টি।

“প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে; তাতে পাহাড়ের মানুষ লাভবান হচ্ছে। কালকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে পর্যটন খাত বিকশিত হবে।”

খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের কারণে খাগড়াছড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থা সমতলের তুলনায় ভিন্ন। উঁচু নিচু পাহাড়ের পথ ধরে তৈরি হয় সড়ক যোগাযোগ। ১৯৭৬ সালে কাঁচা সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। তবে পাহাড়ি সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল বেইলি সেতু বা ব্রিজ। ১৯৮০ সালে পরবর্তী সময়ে নির্মিত তৈরি হওয়া এসব ব্রিজ দিয়ে কেটে গেছে প্রায় চার দশক।

“এ সব ব্রিজ ছিল যোগাযোগের মরণফাঁদ। ব্রিজ ভেঙে গেলে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হত। সড়কের যানবাহনের চাপ বাড়ার সাথে সাথে বেইলি ব্রিজে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়তে থাকে।”

তবে বর্তমানে সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন নিরাপদ। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের আওতায় বেইলি ব্রিজ ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে ৪২টি পিসি গার্ডার সেতু বা পাকা সেতু। সেতু নির্মাণ হওয়ায় কমেছে ভোগান্তি। নিরাপদ হয়েছে পাহাড়ি সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা।”

পাকা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি পাহাড়ি সড়কের উন্নয়নের জন্য সড়ক প্রশস্ত করণের প্রকল্প চলমান রয়েছে বলে জানান সড়ক ও জনপদ বিভাগের এ কর্মকর্তা।

প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাহাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে বলে আশা তার।