এমন সংবর্ধনা ভালো খেলার স্পৃহা বাড়াবে: সাফ জয়ী সানজিদা

ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামতেই তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হয়; প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে জেলা পুলিশ।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2022, 08:28 AM
Updated : 30 Sept 2022, 08:28 AM

গারো পাহাড়ের পাদদেশের গ্রাম কলসিন্দুর থেকে `হিমালয়’ জয় করে ফেরা নারী ফুটবলাররা নিজ জেলা ময়মনসিংহে তাদের সংবর্ধনায় বর্ণিল আয়োজনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন।

নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি বিজয়ী নারীদের নিজ জেলায় প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে ময়মনসিংহে দুই দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সানজিদা-মারিয়াসহ সাফ জয়ী আট নারী ফুটবলারদের ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে বর্ণিল সংবর্ধনা দিয়েছে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ।

সকালে নগরীর টাউন হল পুলিশের রেস্ট হাউজ থেকে হিমালয় জয় করা আট নারী ফুটবলার ও তাদের প্রশিক্ষকদের দুটি ঘোড়ার গাড়িতে করে বিশেষ নিরাপত্তায় পুলিশ লাইনন্সে আনা হয়। ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামতেই তাদের বরণ করা হয়। এরপর মঞ্চে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

এ সময় ফুটবলার সানজিদা আক্তার কতটা আবেগ আপ্লুত ছিলেন তা ফুটে উঠল তার কন্ঠে। তিনি বলেন, “নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে মানুষের এতো ভালোবাসা পাব, তা কোনদিন ভাবতে পারেনি।

“এমন সংবর্ধনা আমাদের ভালো খেলার স্পৃহা বাড়িয়ে দিবে।”

এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল উদ‍্যানের বৈশাখী মঞ্চে এক অনুষ্ঠানে সানজিদা আক্তারসহ আট নারী ফুটবলারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহের চুরখাই থেকে ছাদ খোলা পিকআপে করে ময়মনসিংহে প্রবেশ করেন ফুটবলকন‍্যারা।

শহর প্রদক্ষিণ শেষে জেলা সার্কিট হাউজে আসেন। সেখান থেকে ঘোড়ার গাড়িতে করে নগরীর জয়নুল উদ্যানের বৈশাখী মঞ্চে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নেওয়া হয়।

শুক্রবার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভূঞার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য। এছাড়া নারী ফুটবলার গড়ার কারিগর কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিনতি রানী শীল, কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মফিজ উদ্দিন, কলসিন্ধুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নারী ফুটবল টিমের ম্যানেজার মালা রানী সরকার, নারী ফুটলবলার সানজিদা আক্তার, মারিয়া মাণ্ডা, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আহম্মেদ রানা, সভাপতি একে এম দেলোয়ার হোসেন মুকুল, জেলা ক্রিড়া সংস্থার সহ-সভাপতি সাজ্জাত জাহান চৌধুরী শাহিন ও সাধারণ সম্পাদক এহতেশামূল আলম বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং ফুটবল কন্যাদের পরিবারের লোকজনসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ফুটবল কন্যাকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।

সাফ জয়ী মারিয়া মাণ্ডা বলেন, “নিজ জেলায় দুইদিনের বর্ণিল আয়োজনে আমরা মুগ্ধ। পুলিশ আমাদের ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে এমন সংবর্ধনার আয়োজন করবে সেটা কল্পনাতেও ভাবেনি।”

কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মফিজ উদ্দিন বলেন, “মেয়েদের নিয়ে মাঠে অনুশীলন করার সময় মানুষের নানা কটু কথা শুনতে হয়েছে। এ পর্যন্ত মেয়েদের নিয়ে আসতে পথটা খুব সহজ ছিল না। আজকে গর্বে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আশা করি আমাদের মেয়েরা একদিন বিশ্ব জয় করবে।”

আর জেলার পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভূঞা জানালেন, হিমালয় জয় করা মেয়েদের সংবর্ধনা দিতে পেরে তারা গর্বিত।

“খেলাধুলার প্রয়োজনে মেয়েদের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।” বলেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বদৌলতে আজ মেয়েরা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে হিমালয় জয় করেছে। বঙ্গমাতা শেখ মুজিব ফজিলাতুন্নেচ্ছা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু না হলে মেয়েদের কারণে দেশের এতো সুনাম হতো না। আশা করি মেয়েরা তাদের অর্জন ধরে রাখবে।”