জনকল্যাণে বালু বিতরণে এমপির চিঠি, অবাধে বিক্রির অভিযোগ

সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, বালু বিক্রির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি শুনেছেন এবং তা বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন।

সৈকত আফরোজ আসাদপাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2023, 04:05 AM
Updated : 22 April 2023, 04:05 AM

পাবনার কাজীরহাটে স্থানীয় সংসদ সদস্যের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জনকল্যাণে বিনামূল্যে বিতরণের আড়ালে সরকারের উত্তোল করা বালু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।   

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষকে লেখা সংসদ সদস্যের ওই চিঠিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা ও সরকারি কাজে বিনামূল্যে বালু বিতরণের কথা বলা হয়েছে। 

অভিযোগ উঠেছে, রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ছেলে আমিনুল ইসলাম শাহীনের নেতৃত্বে কোনো দরপত্র, ইজারা কিংবা নিলাম ছাড়া প্রকাশ্যে বালু লুটের মহোৎসব চলছে। 

প্রশাসন বিষয়টি অবগত হলেও এখনও এই বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ হয়নি। 

বিআইডব্লিউটিএ জানায়, পাবনার বেড়া উপজেলার কাজীরহাট ফেরিঘাট এলাকা বিআইডব্লিউটিএ-এর ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজীরহাট-আরিচা নৌ রুটে যমুনা নদী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ বালু স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ফেরিঘাটের পার্শ্ববর্তী নিচু জমিতে রাখা হয়। 

বালি সেখানে রাখার পর একটি চক্র ওই বালুর নিয়ন্ত্রণ ও বিক্রির চেষ্টা করে। কিন্তু, স্থানীয় প্রশাসনের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। 

এরপর চলতি বছরের মার্চ মাসে পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির টার্মিনালের জন্য রাখা এই বালু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থানে জনস্বার্থে বিনামূল্যে ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেন। 

চিঠিতে বালু বিতরণ সমন্বয় ও তদারকির জন্য সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির প্রতিনিধি মনোনীত করেন আমিনুল ইসলাম শাহীনকে।

সংসদ সদস্যের অনুরোধে গত ৫ মার্চ ওই বালু বিআইডব্লিউটিএ টর্মিনাল কাজে সমন্বয় সাপেক্ষে জনস্বার্থে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বিনামূল্যে বিতরণের অনুমতি দেয়। 

স্থানীয়রা বলেন, এমপির প্রতিনিধি হয়েই কয়েকটি এক্সকেভেটর [ভেকু] দিয়ে দিন-রাত প্রকাশ্যে বালু বিক্রি শুরু করেছেন শাহীন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাজীরহাট ফেরিঘাটের প্রস্তাবিত টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বিশাল এলাকাজুড়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে বালু। কয়েকটি ভেকু দিয়ে বালি তোলা হচ্ছে ট্রাকে। ট্রাক ড্রাইভারদের কাছে রশিদ দিয়ে বালু বিক্রি করছেন শাহীনের কর্মচারী ইউনুস। 

বালু কিনতে আসা ট্রাক ড্রাইভার মিলন জানান, গত কয়েকদিন ধরে তিনি এখান থেকে বালু কিনছেন। প্রতি বড় ট্রাক সাড়ে তিন হাজার টাকায় কিনে কাশীনাথপুরে নির্মাণ সামগ্রী ব্যবসায়ী তাসিন এন্টারপ্রাইজের কাছে বিক্রি করেছেন। এখান থেকে কম খরচে বালু পাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীই কিনছেন। 

এ সময় কাজীরহাট ঘাটে শ্রমিক ও চা দোকানিদের সঙ্গে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এলাকার কোনো মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় এক কোদাল মাটিও ফেলা হয়নি। ট্রাকে করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি ছাড়াও চুক্তি অনুযায়ীও বালু সরবরাহ করা হচ্ছে। 

তবে বালু বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আমিনুল ইসলাম শাহীন। 

তিনি বলেন, “আমরা বালু বিক্রি করছি না; স্থানীয় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় বালু পাঠানো হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা অসত্য অভিযোগ করছেন।” 

এ বিষয়ে পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, “জনকল্যাণে ব্যবহারের জন্য স্থানীয়দের অনুরোধে জন্য বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলাম। তবে বালি বিক্রির অভিযোগ সম্পর্কে আমিও শুনেছি। এটি বন্ধে আমি নির্দেশনা দিয়েছি।” 

এদিকে, কাজীরহাট ঘাটের বালু বিক্রি কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলীও। 

তিনি বলেন, “ভূমি মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী নদী থেকে উত্তোলন করা ড্রেজিংয়ের বালু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের। সংসদ সদস্যের অনুরোধে বিআইডব্লিউটিএ তার প্রতিনিধিকে কীভাবে বালু সরবরাহের অনুমতি দিল তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমি সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জেলা প্রশাসক স্যারকে পাঠিয়েছি। তিনি বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।” 

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, “নীতিমালা অনুযায়ী উত্তোলনকৃত বালু নিলাম বা ব্যবহারের স্বত্ব জেলা প্রশাসনের। আমরা কেবল উত্তোলনের দায়িত্ব পালন করি। কাজীরহাটের বালুর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ৬ ধারায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে:  

“৬। (১) দেশের যে কোনো চর এলাকা অথবা যে কোনো স্থলভাগ হইতে বালু বা মাটি সরকার কর্তৃক ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে এবং সরকারি যে কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দিষ্ট নদী, নদী বন্দর, সমুদ্র বন্দর, খাল-বিল প্রভৃতি স্থান হইতে উত্তোলিত বালু বা মাটির বিপণনের প্রয়োজন দেখা দিলে উক্ত বিপণনের জন্য একক কর্তৃপক্ষ হইবে ভূমি মন্ত্রণালয়। 

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের সহিত সমন্বয় করিবে।”