সিলেটের জেলা প্রশাসক বলেন, “আগামী কদিন ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে; এজন্য আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
Published : 24 Jun 2024, 11:35 PM
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনও প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষ পানিবন্দি এবং আশ্রয়কেন্দ্রে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ আছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে সিলেট বিভাগের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনও প্রধান চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপরেই রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো।
এর মধ্যে টানা তিন দিন রোদের পর সোমবার সকালে সিলেটে ফের বৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, “রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে।”
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, জেলার হাওরসহ সিলেটের নিচু এলাকা পানিতে পরিপূর্ণ। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের জুড়ী ও মনু নদের পানি সিলেটের কুশিয়ারা নদীতে যুক্ত হচ্ছে; তাই নদীর পানি নামছে ধীর গতিতে।
সোমবার বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় পানি বেড়েছে বলেও জানান পাউবো কর্মকর্তা।
পাউবোর তথ্যমতে, সোমবার সকাল ৯টায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি চার পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি আমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সোমবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় পনিবন্দি আছেন আট লাখ ৩৩ হাজার ৬৫ জন। রোববার পানিবন্দি ছিলেন ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৭ জন।
সোমবার জেলার ২৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ১৩ হাজার ১৫৪ জন। রোববার জেলার ৩১০ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ১৯ হাজার ৭৩৮ জন।
এর আগে শনিবার আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন ২২ হাজার ৬২৩ জন; শুক্রবার আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫ হাজার ২৭৫ জন ছিলেন। বন্যা পরিস্থিতিতে জেলায় ৭২০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ অব্যাহত আছে। আগামী কদিন ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে; এজন্য আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার: পাটমন্ত্রী
সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণে সরকার সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
সোমবার দুপুরে সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণকালে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, “সুরমা, কুশিয়ারা নদী খননের মাধ্যমে সিলেটবাসীকে বন্যা থেকে রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বছর সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে সিলেট পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
“আমরা শুধু ত্রাণ বিতরণ করতে চাই না। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। দেশের যেকোনো দুর্যোগ-দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে দাঁড়ায়।”
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। শেখ হাসিনা সবসময় সিলেটবাসীর পাশে আছেন। আপনারা তার ওপর আস্থা রাখুন।”
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খাঁন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।
পরে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের উদ্যোগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলামে বন্যার্তদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কেন্দ্রীয় নেতারা।
সকাল ১১টায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের পরিচালনায় নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড তেরোরতন এলাকায় বন্যার্তদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সহায়তা প্রধান করেন নেতারা।
সকাল ৮টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
বিএনপির খাদ্য সহায়তা
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলীখাল ও ঈসাকলস ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সিলেট জেলা বিএনপির উদ্যোগে ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিনের সহযোগিতায় ৫৮০ বন্যার্ত মানুষের মাঝে খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
পরে এক সভায় সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের অবহেলা আর অদক্ষতার করণে সিলেটে বার বার বন্যা হচ্ছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীসহ সিলেটের সব নদ-নদী খনন করার জন্য বারবার তাগিদ দিলেও সরকার এতে কর্ণপাত করছে না।
“উল্টো এক ব্যক্তির জন্য হাওরজুড়ে রাস্তা নির্মাণ করে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষকে বারবার পানিবন্দি করে রাখছে।”
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, “আওয়ামী লীগ সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে শুধু বিএনপিকে দোষারোপ করে। অথচ তারা সর্বক্ষেত্রে নির্লজ্জভাবে দলীয়করণ করে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে।”
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবরের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, কোহিনুর আহমদ, মাহবুব আলম, শওকত আলী বাবুল, ফরহাদ খন্দকার, নূরুল মোত্তাকিম বাদশা, ছাত্রদল নেতা আবদুল সালাম টিপু, রুবেল আহমদ, আব্দুল মোমিন লস্কর, আবুল আহমদ, রাহেল আহমদ, রাসেল শাহরিয়ার, রাজু আহমদ, সোলেমান সিদ্দিকি।