অনেকের ধান, পাট, তিল ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আবার অনেকের পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে।
Published : 13 Jul 2024, 09:31 PM
টাঙ্গাইলে নদ-নদীর পানি কমলেও যমুনা, ঝিনাই ও ধলেশ্বরী নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ছয় উপজেলার ১২৩ গ্রামের ৫২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবারের সংকট। ছয় হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে, এছাড়াও পানিতে ভেসে যাওয়ায় মাছ বের হয়ে গেছে দেড় হাজার পুকুরের।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ঝিনাই নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও ধলেশ্বরী নদীর পানি ১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও বাসাইল উপজেলার ১২৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সরেজমিন টাঙ্গাইল সদর, হুগড়া, কাকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায়, নৌকা ও কলা গাছের ভেলা ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। কাজ না থাকায় অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
অনেকের ধান, পাট, তিল ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আবার অনেকের পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে। এছাড়াও অনেকেই গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ।
সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের বাসিন্দা আনোয়া হোসেন বলেন, “বাড়ির চারিদিকে পানি। নিজের মোটরসাইকেল অন্যজনের বাড়িতে রেখে যাতায়াত করতে হয়।
“সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের গ্রামে কেউ সহযোগিতা পায়নি। নিম্ন আয়ের মানুষ যারা রয়েছেন, তাদের অনেকের অনাহারে-অর্ধহারে দিনপার করতে হচ্ছে।”
কালিহাতীর দুর্গাপুর গ্রামের পল্লি চিকিৎসক আব্দুল মান্নান বলেন, “আমাদের গ্রামের পাকা সড়কটি তলিয়ে গেছে। এছাড়াও প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি। জনপ্রতিনিধি বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো ত্রাণ কেউ পাইনি।”
সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, “কেউ নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। অনেকের ধান, পাট, তিল বীজতলা তলিয়ে ক্ষতি হয়েছে।”
অনেকের মতো ত্রাণ সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেন তিনিও।
সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বাবু মিয়া বলেন, “আমাদের গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষ পানিবন্দি। পাট ও বিভিন্ন সবজির ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। আমাদের গ্রামের কাঁচা সড়কটি উঁচু করে পাকা করলে অনেকের দুর্ভোগ কমে যেত।”
গালা ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক আক্কাস আলী বলেন, “চলতি মৌসুমে আমি দুই বিঘা জমিতে ধুন্দুল করেছিলাম। ফলন ভাল হওয়ায় এক দিন পরপর চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে বিক্রি করতে পারতাম। এ বছর বন্যায় সব নষ্ট হয়েছে, চরম ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও সোয়া এক বিঘা জমির পুঁইশাক নষ্ট হয়েছে।”
তবে জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি উপজেলায় জিআরের ২০ টন করে চাল দেওয়া হয়েছে। দুই হাজার করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নগদ অর্থ ও নৌকা দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে, প্রয়োজন হলেই দেওয়া হবে।