মঈন আব্দুল্লাহর এই সফর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে বরিশালজুড়ে।
Published : 14 Aug 2024, 12:24 PM
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাত্র সাত দিনের মাথায় বরিশালে ঘুরে গেলেন সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মেজ ছেলে মঈন আব্দুল্লাহ।
আগুনে পুড়ে যাওয়া নিজের বাড়ি দেখে এবং মায়ের কবর জিয়ারত করে আবার ফিরে যান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের ছেলে মুয়াজ আরিফ।
মঈন আব্দুল্লাহর এই সফর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে বরিশালজুড়ে।
কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মঈন আব্দুল্লাহর বাবা বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই। মঈন আব্দুল্লাহর ভাই বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ।
মঙ্গলবার দুপুরে একটি কালো প্রাইভেট কারে বরিশালে আসেন মঈন। প্রাইভেট কারটি তিনিই চালাচ্ছিলেন।
নগরীর কাউনিয়া এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুর আড়াইটায় মঈন আব্দুল্লাহ প্রথমে কাউনিয়া ফার্স্ট লেনে তার নানা বাড়িতে আসেন। তাদের গাড়ির সঙ্গে দুটি সাদা প্রাইভেট কার ও তিনটি মোটরসাইকেল ছিল।
সেই বাড়িতে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে বের হওয়ার সময় স্থানীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন মঈন ও মুয়াজ।
কাউনিয়া থেকে বের হয়ে তারা নগরীর কালিবাড়ি রোডে সেরনিয়াবাত ভবনে যান।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর এই বাসভবনটি সরকার পতনের দিন পুড়িয়ে দিয়েছিল বিক্ষুব্ধরা।
মঈন ও মুয়াজ পুড়ে যাওয়া বাড়িটি বাইরে থেকে পরিদর্শন করেন। তারা ভেতরে প্রবেশ করেননি।
স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জানান, কালীবাড়ি রোড থেকে মঈন আব্দুল্লাহ নগরীর মুসলিম গোরস্থানে গিয়ে তার মা বেগম সাহানারা আব্দুল্লাহ ও কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটুর কবর জিয়ারত করে বরিশাল ত্যাগ করেন।
নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের টানা পাঁচবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটুর পুড়ে যাওয়া মরদেহ সেরনিয়াবাত ভবন থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
হঠাৎ সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে মঈন আব্দুল্লাহ বলেন, “আমার জন্মস্থান বরিশালে আমি যাব এতে অবাক হওয়ার কী আছে? আমি তো রাজনীতি করি না। আমি ব্যবসায়ী, এফবিসিসিআইর পরিচালক এবং সিআইপি।
তিনি বলেন, “দুপুরের একটু আগে বরিশালে গেছি। মায়ের কবর জিয়ারত করেছি। তারপর গেছি কাউনিয়া এলাকার মামা বাড়িতে। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়েছি।”
এই সফরে উপদেষ্টার ছেলের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মঈন বলেন, “সে তো আমার ছোটবেলার বন্ধু। সেই শিশুকাল থেকে আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। বন্ধুত্ব আর রাজনীতি মিলিয়ে ফেলবেন না।”
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া পৈতৃক বাড়ির ভেতরে না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার বাবা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে ছাড়া ওই বাড়িতে আমি কী করে যাই? তাছাড়া পত্র-পত্রিকায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া আমার বাড়ির যেসব ছবি দেখেছি, তাতে সেখানে গেলে হয়তো নিজেকে সামলাতে পারব না।
“ওই বাড়ির সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অনেকবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমার দাদা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের গড়া ওই বাড়িতে কোনোদিন একটা ঢিলও পড়েনি।
তিনি বলেন, “যতদূর জানি, আমার পরিবারের কেউ কখনো এভাবে কারও বাড়ি পোড়ায়নি। আমি বাবার সন্তান হিসাবে গর্ববোধ করি। ওই বাড়িতে যখন যাব তখন বাবার সঙ্গেই যাব।”
এদিকে হাসানাতপুত্র মঈন আব্দুল্লাহর এই সফর নিয়ে বরিশালে চলছে নানা আলোচনা।
সাবেক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, “পুরো বরিশালকে ১৫টি বছর শাসন করে অস্থিতিশীল করেছে পরিবারটি। এখন তাদের প্রকাশ্যে ঘোরাটা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।”
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, “নিজের শহরে তিনি (মঈন) আসতেই পারেন। তবে সময় নির্বাচনটা তার সঠিক হয়নি। এখন যদি ছাত্র-জনতা তার ওপর হামলা চালাতো বা গাড়ি ভাঙচুর করত, সেই দায় তিনি কাকে দিতেন?”