ইউএনও বলেন, আগেও একবার শহীদ মিনারটি ভেঙে পড়ে। পরে তা মেরামত করা হয়।
Published : 21 Feb 2025, 05:57 PM
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুনবতী ডিগ্রি কলেজের আঙিনায় শহীদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হলেও ভোরে ভাঙা পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার রাতে কলেজের শিক্ষকসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ফুল দেওয়ার পর গভীর রাতে শহীদ মিনারটির তিনটি স্তম্ভের মধ্য দুইটি ভাঙার ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে যান থানা পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
শুক্রবার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জামাল হোসেন বলেন, “আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।”
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
শহীদ মিনারটি ভাঙার কারণ ও জড়িতদের চিহ্নিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন কাজ করছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “এর আগেও শহীদ মিনারটির স্তম্ভ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল। পরে তা মেরামত করা হয়। এই মিনারগুলোর ভেতরে লোহার রড দেওয়া নেই শুধু কংক্রিট ও ইটের গাঁথুনি দেওয়া। তাই ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কলেজের নৈশপ্রহরী শামছুল আলম বলেন, “মাঝরাতে বিকট শব্দ শুনে আমি বের হই। আশপাশে খোঁজাখুঁজির পর শহীদ মিনারে গিয়ে দেখি দুইটি স্তম্ভ পড়ে আছে।”
গুনবতী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ বলেন, “রাত ১২টা ১ মিনিটে আমরা কলেজের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পন করি। এর পর বিএনপির পক্ষে দুটি পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এ সময় কলেজের প্রভাষক শহিদুল ইসলাম, ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন। তারপর আমরা চলে যাই।”
তিনি বলেন, “রাত ২টার পর কলেজের নৈশপ্রহরী সামছুল আলম আমাকে ফোন করে বলেন, শহীদ মিনারের দুটি স্তম্ভ ভাঙার আওয়াজ তিনি শুনেছেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি কাউকে পাননি।”
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও বলেন, “এই শহীদ মিনারটি গুণবতী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে পরিচিত। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা দিনের বেলায় শহীদ মিনারটি সাজসজ্জা করে প্রস্তুত করেছিলাম। এ বিষয়ে আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হবে।”
গুনবতী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফ জিয়া বলেন, “একুশের প্রথম প্রহরে কলেজ কর্তৃপক্ষের পরে আমরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পমাল্য অর্পন করে চলে যাই। সকাল বেলা খবর পাই, রাতের আধারে কে বা কাহারা শহীদ মিনারটি ভেঙে দিয়েছে। এতে করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি।”
উপজেলা জামায়াতের আমির মাহফুজুর রহমান বলেন, “শহীদ মিনার আমাদের জাতীয় চেতনার প্রতীক। রাতের আঁধারে শহীদ মিনারের দুটি স্তম্ভ ভেঙে ফেলায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরাও চাই, কারা ভেঙেছে তা বের হয়ে আসুক।”
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা বলেন, “একুশ আমাদের চেতনা। একুশে ফেব্রুয়ারির পর থেকে এদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামের পরে দেশ স্বাধীন হয়েছে। যারা গুণবতী শহীদ মিনারটি ভেঙে দিয়েছে, আমি সেইসব অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি এবং শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিসি ক্যামেরা না থাকায় এখনই কারা শহীদ মিনার ভেঙেছে তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি জিডি করেছে।
তিনি বলেন, “ঘটনাটি দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না।”