পাবনায় সাঁথিয়ায় এ ঘটনার পর লজ্জায় দুই ভাই গ্রাম ছেড়েছেন বলে জানান স্বজনরা।
Published : 24 Apr 2025, 08:29 PM
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় চুরির অপবাদে সালিশি বৈঠকের রায়ে দুই ভাইকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ালে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আইনের আশ্রয় না নিয়ে সালিশি বৈঠকে এভাবে কাউকে শাস্তি দিতে পারেন কি-না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
বুধবার উপজেলার করমজা ইউনিয়নের আফড়া ভাদালিয়াপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান সাঁথিয়া থানার ওসি সাইদুর রহমান।
এ ঘটনার পর লজ্জায় উপজেলার করমজা ইউনিয়নের আফড়া ভাদালিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল মণ্ডলের ছেলে বাবু মণ্ডল (২৭) ও হোসেন মণ্ডল (২৪) এলাকা ছেড়েছেন।
করমজা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লোকমান সরদারের বাড়িতে সালিশি বৈঠকের এ রায় দেওয়া হয় বলে জানান ভুক্তভোগীর স্বজনরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার আফড়া ভাদালিয়াপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে রহম আলীর বাড়ির সিঁধ কেটে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বুধবার সকাল ৮টার দিকে ইউপি সদস্য লোকমান সরদারের বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসে।
সেখানে গ্রাম্য মাতব্বরদের রায়ে ওই দুই ভাইকে জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানো হয়। এ সময় ঘটনাটি অনেকেই মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে লাইভ করেন। মুহূর্তেই ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে যায়।
ঘটনার পর থেকে বাবু মণ্ডল ও হোসেন মণ্ডল গ্রাম ছেড়েছেন। মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তাদের বাবা আব্দুল মণ্ডল বলেন, “শত্রুতাবশত মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ইউপি সদস্য লোকামান সরদারের উপস্থিতিতে গ্রাম মাতব্বররা আমার ছেলেদের মারধর ও জোর করে চুরির কথা স্বীকার করিয়ে জুতার মালা পরিয়ে সারা গ্রাম ঘুরিয়েছেন।
“ছেলেদের সঙ্গে এ ঘটনার পর থেকে লজ্জায় আমি নিজেও বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। আমি মাতব্বরদের বিচার চাই।”
বাবু মণ্ডলের স্ত্রী কুলসুম খাতুন এবং হোসেন মণ্ডলের স্ত্রী পারভিন খাতুন জানান, তাদের স্বামীরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। তারা মাতব্বরদের কাছে ক্ষমা চেয়েও রক্ষা পাননি। লজ্জায় মুখ দেখাতে না পেরে তারা গ্রাম থেকে চলে গেছেন, কোথায় গেছেন তাও বলে যাাননি। তারা গ্রাম মাতব্বরদের শাস্তি দাবি করেছেন।
গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, “ছেলে দুটা যদি অপরাধ করেই থাকে, তাদেরকে পুলিশে দেওয়া উচিৎ ছিল।”
ইউপি সদস্য লোকমান সরদার বলেন, “ওই দুই যুবক বাড়ির সিঁধ কেটে চুরি করতে ঢুকেছিল। সেই সময় হাতেনাতে কেউ তাদের না ধরলেও, এ ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত ছিলেন বলে বিভিন্নভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।
“এ ঘটনায় আমার বাড়িতে সালিশ বসেছিল এবং প্রধান হিসেবে আমি উপস্থিত থেকে স্বাক্ষর করেছিলাম। কিন্তু জরুরি কাজের জন্য বাইরে চলে গিয়েছিলাম। সালিশে রায়ের সময় আমি ছিলাম না। জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর বিষয়ে কিছু জানি না।”
অস্বীকার করলেও দুই ভাইকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর সময় ইউপি সদস্যকে ভিডিওতে দেখা গেছে।
ওসি সাইদুর রহমান বলেন, “এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামের মাতব্বরা এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন। জুতার মালা পরিয়ে দুই ভাইকে গ্রাম ঘোরানো উচিত হয়নি।”