ধুলোবালি আর খানাখন্দে ভরা এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করা মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
Published : 06 Apr 2025, 09:02 AM
খুলনার সর্বদক্ষিণের সুন্দরবনঘেরা সমুদ্র উপকূলবর্তী উপজেলা কয়রা। উপজেলাটি ভৌগোলিক কারণে দুর্যোগকবলিত। এখানে প্রায় প্রতি বছর দুর্যোগে ঘর-বাড়ির সঙ্গে নষ্ট হয় রাস্তাঘাট।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বিভিন্ন কারণে নষ্ট হওয়া উপজেলার অন্তত ২৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংস্কার কাজের জন্য টাকা বরাদ্দ হয় গত কয়েকটি অর্থবছরে। দরপত্রের মাধ্যমে কাজও শুরু হয়। তবে বছরের পর বছর চলে গেলেও সড়কগুলোর সংস্কার কাজ শেষ হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কগুলোর কাজ শেষ না করে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখার কারণে দুর্ভোগে আছেন তারা।
ধুলোবালি আর খানাখন্দে ভরা এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করা মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে পৌঁছেছে।
বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে চলমান এসব সড়ক সংস্কার কাজের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর-এলজিইডি।
এলজিইডির আওতায় উপজেলার শাকবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৬ নম্বর কয়রা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সড়কটি সংস্কারের জন্য জয় মা ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২২ সালের মে মাসে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখনো সেই কাজ শেষ হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে সড়কে বিছিয়ে রাখা ইটের খোয়া যানবাহনের চাকার আঘাতে গুঁড়ো হয়ে লালচে ধুলো আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে এ পথে মানুষ যাতায়াত করছেন নাক-মুখে চেপে ধরে।
কয়রা সদর থেকে ৪ নম্বর কয়রার দিকে যেতে সড়কটি সংস্কারে রাকা এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর। ১০ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়া উপজেলার অন্য ২১টি সড়কের সংস্কার কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজ সম্পন্ন হয়নি।
সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সড়ক সংস্কার কাজের ধীরগতি ও মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে।
কয়রা সদরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, “সাড়ে তিন বছরেও সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় ধুলোবালি ও খানা-খন্দে এলাকাবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, তাও নিম্নমানের। ফলে সড়কে ছোট-বড় গর্ত বা ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে।”
উপজেলার ১ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, “কয়রা সদর থেকে সরকারি পুকুরপাড় পর্যন্ত সড়কের কাজ অসমাপ্ত রাখায় যানবাহন ও পথচারিদের যাতায়াতে ভোগান্তি হচ্ছে।”
উপজেলার দেয়াড়া গোপালের মোড় থেকে হোগলা অভিমুখি প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়কটির নির্মাণ কাজে কয়েক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। কাজ নিম্নমানের হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের দাবি, “দীর্ঘদিন ধরে সড়কের সংস্কার চলছে। দুই-তিন মাস পরপর ঠিকাদাররা শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করে এলাকাবাসীকে দেখায়, কাজ চলমান আছে।
“তারপর উপজেলা প্রকৌশলীদের যোগসাজশে বিল ছাড়ের পর আর তাদের খবর থাকে না।”
তিনি এ জন্য উপজেলা প্রকৌশলীদের গাফিলতিকেই দায়ী করেন।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় চলছে এ দুটি সড়কের কাজ। একটি কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের অগাস্টে, অন্যটি শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের নভেম্বর।
বাকি ২১টি সড়কের অবস্থাও একই। কাজের মেয়াদ শেষ হলেও সংস্কারকাজ মাঝপথে এসে বন্ধ হয়ে গেছে।
সড়কগুলোর সংস্কারকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও এলজিইডির তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
মেয়াদ শেষ হলেও উপকূলীয় জনপদ কয়রার ২৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কারসহ ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের ১২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার ও টেকসই কাজ, ৬৫ কিলোমিটার কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন কাজের কোনোটিই শেষ হয়নি।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক ওবায়দুল কবির সম্রাট বলেন, “সড়ক, বেড়িবাঁধসহ সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন নির্মাণ প্রকল্পগুলোর কাজ ঠিক সময়ে শেষ না হওয়া যেন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে।
“ঠিকাদারদের গাফিলতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্নীতিই এর জন্য দায়ী।”
সড়ক সংস্কার কাজের ঠিকাদারদের ভাষ্য, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে তারা ধীরগতিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্যও আবেদন করেছেন।
উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, “সড়কগুলোর কাজ যথাসময়ে শেষ করতে ঠিকাদারদের একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কয়েকজন ঠিকাদার কাজ শেষ করতে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।”
আফজাল আরো বলেন, “সময় বাড়ানোর পরও যারা কাজ শেষ করেননি, সেই ঠিকাদারদের কার্যাদেশ ও জামানত বাতিল হবে।”
উপজেলা প্রকৌশলী দারুল হুদার কাছে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দিলেও তার সাড়া মেলেনি।
এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, “এ বিষয়ে আমার তেমন জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কমিশন আদায়সহ নানা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “ঠিকাদারদের সুবিধা না দিতে পারলে তারা প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন, এটাই স্বাভাবিক।”