যুবদল নেতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত কর্মীরা প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছেন।
Published : 28 Dec 2024, 07:44 PM
কুড়িগ্রামের উলিপুরে সালিশে প্রতিপক্ষের হামলায় এক যুবদল নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় উলিপুর থানার গোলঘরে চলা সালিশের পর এ হামলা ও মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে শনিবার হত্যা মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন উলিপুর থানার ওসি জিল্লুর রহমান।
মামলায় আসামি হিসেবে জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জাফর সোহেল রানা ও সাবেক ছাত্রদল নেতা ফিরোজ কবির কাজলসহ ২০ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে।
যারা সবাই বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের অনুসারি বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ২৫জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মারা যাওয়া আশরাফুল আলম (৪০) পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি পৌরসভার কাজিরচর এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী আয়নাল হকের একমাত্র ছেলে।
তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভিরুল ইসলামের অনুসারী।
শনিবার বাদ আসর কাজিরচর মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে যুবদল নেতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত কর্মীরা প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বৃদ্ধি করেছে পুলিশি টহল।
জানা গেছে, ২৫ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার একটি ‘বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা’র ঘটনায় ছেলের বাবা এক ছাত্রদল নেতাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। সে অভিযোগের মীমাংসার জন্য শুক্রবার উলিপুর থানার গোলঘরে সালিশে বসেন উভয় পক্ষ।
উলিপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বুলবুল জানান, সালিশে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের পক্ষের লোকজন ছেলের পক্ষে অবস্থান নেন এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভিরুল ইসলামের পক্ষের লোকজন ছাত্রদল নেতার পক্ষে অবস্থান নেন।
সালিশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের বরাতে তিনি আরও বলেন, সালিশের এক পর্যায়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে এক পক্ষ অপর পক্ষের ওপর হামলা চালান।
হামলায় তাসভিরুল ইসলামের পক্ষের যুবদল নেতা আশরাফুল আলম ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসনাত রাজিবসহ কয়েকজন আহত হন।
এ সময় আশরাফুল আলম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সহকর্মীরা তাকে দ্রুত উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মেহেরুল ইসলাম বলেন, রাত আনুমানিক ৮টার দিকে আশরাফুল ইসলামকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে পরীক্ষা করে দেখা যায় হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে আশরাফুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে তাসভীরুল ইসলামের সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল খালেকের সমর্থক আমিনুল ইসলামের হোটেলে ভাঙচুর করেন।
এরপর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জাফর সোহেল রানা ও সাবেক ছাত্রদল নেতা ফিরোজ কবির কাজলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন।
পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উলিপুর থানার ওসি জিল্লুর রহমান বলেন, “ঘটনার সময় আমি ছুটিতে ছিলাম। গত রাতেই (শুক্রবার) কর্মস্থলে যোগ দেই। ঘটনা থানা চত্বরের বাইরে ঘটেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।”
“এর মধ্যে শনিবার নিহতের বাবা আয়নাল হক বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। ”
ওসি আরও বলেন, এছাড়া কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তবে শুক্রবার ওসি ছুটিতে থাকায় দায়িত্বে ছিলেন থানার সেকেন্ড অফিসার আব্দুর রশিদ।
তিনি বলেন, “ছেলে-মেয়ের প্রেম ঘটিত ব্যাপারে বিএনপির দুটি পক্ষ শুক্রবার বিকালে থানায় গোলঘরে বসে নিজেদের মধ্যে আপস-মিমাংসা করার চেষ্টা করেন।
“সন্ধ্যার পর আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে তাদের ভিতরে উত্তেজনা ও বচসার সৃষ্টি হলে আমরা তাদের থানার বাইরে পাঠিয়ে দেই। আমরা সমঝোতা হয়ে ফের থানায় আসতে বলি।
“কিন্তু তারা থানার বাইরে গেটের কাছে গিয়ে উভয় পক্ষে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তখন প্রতিপক্ষের ঘুষির আঘাতে আশরাফুল আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ”
ঘটনার সময় পুলিশের লোকজন সবাই থানার ভিতরে ছিল বলে দাবি করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপি সভাপতি হায়দার আলী মিয়া এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভিরুল ইসলামের নম্বরে বারবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ফোন ধরলেও এ ব্যাপারে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।