রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নে ‘জমির সেচ না পেয়ে’ দুই সাঁওতাল কৃষকের বিষপানে আত্মহত্যার এক বছরের মাথায় ফের একই কারণে একই সম্প্রদায়ের আরেকজন কৃষক আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন।
গত রোববার দুপুরে কীটনাশক পানের পর দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামের সাঁওতাল কৃষককে (৩৫) গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর যুবকের লিভার ওয়াশ করা হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত।“
গত ২৪ মার্চ দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি (৩৬) ও ২৫ মার্চ তার চাচাত ভাই রবি মারান্ডি (২৭) বিষপানে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ, জমিতে সেচ না পেয়ে ফসল নষ্ট হতে থাকলে মনের দুঃখে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সে ঘটনায় নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলা হয়। পরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সাখাওয়াতকে বাদ দিয়ে সেখানে হাসেম আলী বাবুকে নিয়োগ দেয়।
এর এক বছরের মাথায় সেখানে আবার একই ধরনের ঘটনা ঘটল।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাঁওতাল যুবক সাংবাদিকদের বলেন, সেচের পানির জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে অপারেটরের কাছে ঘুরছেন। কিন্তু নলকূপ অপারেটর হাসেম আলী বাবু তার জমিতে পানি দিচ্ছেন না। রোববার দুপুরে তিনি আবার পানির জন্য যান। তখন বাবু তাকে এক বোতল কীটনাশক দেন এবং সেটা বাবুর জমিতেই দিয়ে আসতে বলেন।
কীটনাশকের বোতল হাতে নিয়ে তিনি অপারেটরকে বলেন, তার জমিতে পানি না দিলে তিনি এই বিষ খাবেন। তারপরও তার জমিতে পানি দেওয়া হয়নি। তখন তিনি ওই কীটনাশক পান করেন। পরে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
সাঁওতাল কৃষকের বিষপানের বিষয়ে জানতে চাইলে গভীর নলকূপের অপারেটর হাসেম আলী বাবু সাংবাদিকদের বলেন, “কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। তখন কেউ পানির জন্য আসেননি। এখন সবাই একসঙ্গে আসছেন। সবাইকে তো একসঙ্গে পানি দিতে পারব না।”
দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, “ওই সাঁওতাল কৃষক তার জমিতে পানি পাচ্ছেন না বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিলেন। একবার এক ইউপি সদস্যকে তার জমি দেখতে পাঠানো হয়। তিনি দেখে এসে বলেছিলেন যে, ওই জমিতে কয়েকদিন পরে পানি দিলেও চলবে।”
বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, “গত বছরের ঘটনার পর ওই গভীর নলকুপের অপারেটরকে বাদ দেওয়া হয়। আবার কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটল? বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এদিকে, খবর পেয়ে সোমবার রাতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ হাসপাতালে যান। তিনি মুকুল সরেনের সঙ্গে কথা বলেন এবং চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।
পরে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন এ ঘটনা ঘটলে তা জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিএমডিএর সঙ্গে কথা বলে সেচ সেবা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গভীর নলকূপ থেকে পানি না পেয়ে গত বছর বিষপান করে দুই কৃষক আত্মহত্যা করলে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলা করা হয়।
এরপর সাখাওয়াত গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এখন তিনি জামিনে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: