‘সেচ না পেয়ে’ বিষপানে ২ সাঁওতালের মৃত্যু, আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় জমির জন্য ‘সেচের পানি না পেয়ে’ সাঁওতালি দুই কৃষক বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে পরিবার অভিযোগ করেছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হয়েছে।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2022, 11:31 AM
Updated : 26 March 2022, 11:46 AM

মৃত ব্যক্তিরা হলেন- উপজেলার নিমঘটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডি।

তাদের মৃত্যুর পর শুক্রবার রাতে অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমরম বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলাটি করেন বলে গোদাগাড়ী থানায় ওসি কামরুল ইসলাম জানান।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ধান ক্ষেতে সেচের পানি না পেয়ে গত বুধবার বিকালে কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডি বিষপান করেন। ওইদিন রাত ৯টার দিকে অভিনাথ মার্ডি বাড়িতেই মারা যায়।

রাতেই রবি মার্ডিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, “বিষপানে অসুস্থ্ অবস্থায় গত বুধবার দিবাগত রাত ১২টার পর রবি মার্ডিকে হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।”

ঘটনার দিন পুলিশ ‘সাদা কাগজে রোজিনার সই নিয়ে’ একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছিল।

ওসি কামরুল বলেন, আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

“মামলার পর রাতে আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলানো হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি আগেই আত্মগোপন করেছে। তাকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

এদিকে, শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এবং আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এ সময় তিনি নিহতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস এবং তাদের সান্ত্বনা দেন।

পরে বাদশা সাংবাদিকদের বলেন, “১২ দিন ঘুরেও যখন ফসল রক্ষার জন্য অভিনাথ পানি পাননি, তখন তিনি অপারেটরকে বলেন, পানি না দিলে আমি কিন্তু বিষ খেয়ে মরে যাব। তারপরও অপারেটর বিষয়টি আমলে নেননি।

“এটা আত্মহত্যার প্ররোচনার মধ্যে পড়ে। তাই আমি নিজে থানায় গিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা রেকর্ড করার সঙ্গে সঙ্গে যেন গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় সেজন্য পলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” 

সংসদ সদস্য অভিযোগ করেন, “বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকুপরের পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়। এ নিপীড়ন গোটা গোদাগাড়ী ও তানোর এলাকার।”

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য সরকার ও মানবাধিকার কমিশনসহ উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দাবি করেন।