শেরপুরের গারো পাহাড়ে বাঘ আতঙ্ক

স্থানীয়দের ভাষ্য, বাঘগুলোর আকার লম্বায় প্রায় ৪ ফুট ও উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট।

শেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2022, 04:50 AM
Updated : 6 Oct 2022, 04:50 AM

শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় সংলগ্ন পাঁচটি গ্রামে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে বন এলাকায় গবাদি পশু চরাতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাঁকাকূড়া, পশ্চিম বাঁকাকূড়া, গান্ধিগাঁও, হালচাটি ও ছোট গজনী গ্রামে গত এক সপ্তাহে গরুসহ প্রায় ২০টি ভেড়া ও ছাগল বাঘের পেটে গেছে। বনের ভেতর আহত এবং ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে একটি ছাগল, একটি ভেড়া ও একটি গরু। বাঘের আক্রমণের ভয়ে গ্রামের শিশুরাও স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে।

বাঘগুলো লম্বায় প্রায় ৪ ফুট ও উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো মানুষ ওই বাঘের আক্রমণের শিকার হয়নি বলে জানান তারা।

ঘটনাটি জানার পর বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের পক্ষ থেকে স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

বাঁকাকুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম জানান, প্রকাশ্যে দিনের বেলাতেই ঝিনাইগাতীর বনাঞ্চলে চলাফেরা করছে বাঘ। সেই সঙ্গে বন সংলগ্ন বিভিন্ন বাড়িতে হামলা করে ছাগল ও ভেড়া ধরে গিয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে গভীর জঙ্গলে ওই ছাগল ও ভেড়ার নাড়ি-ভুড়ি ও দেহাবশেষ পড়ে থাকতে দেখতে পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

তিনি বলেন, “আমি প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে বনের মধ্যে ঘরে থাকি। আমি সপ্তাহ খানেক ধরে রাতে বাঘের ডাকাডাকি শুনছি। আগে ছিল বন্যহাতির আতঙ্ক, এখন নতুন করে শুরু হয়েছে বাঘের আতঙ্ক।”

একই গ্রামের স্কুল ছাত্র রবিন বলেন, “আমরা এখন দলবদ্ধভাবে বনের রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য রাস্তায় স্কুলে যাচ্ছি। বাবা-মা আমাদের বাঘের আক্রমণের জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন। আমরা স্কুলে যেতে এখন ভয় পাচ্ছি।”

এক সপ্তাহ ধরে বাঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে জানিয়ে রাংটিয়া রেঞ্জের বন বিভাগের বন প্রহরী আলম মিয়া বলেন, “আমি নিজের চোখেও বাঘ দেখেছি। এছাড়া রাতে আমার বাড়ি থেকে দুটি ছাগল বাঘে কামড় দিয়ে ধরে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা আমাদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।“

উত্তর বাকাকুড়া গ্রামের আব্দুর রহমান নামে এক কৃষক বলেন, “রাতে আমার ছাগল বাঘে আক্রমণ করে। আমি বাঘকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। পরে বাঁশ-লাঠি নিয়ে তাড়া করলে আমার ছাগলটি ছেড়ে দিয়ে বাঘ চলে যায়। এতে আমার ছাগলটি গুরুতর আহত হয়েছে। আহত ছাগলটিকে এখন চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, দিনের বেলায় বাঘ গহীন বনে অবস্থান করে। রাতের বেলায় এদের আনাগোনা শুরু হয়। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি। বিশেষ করে আমাদের শিশু বাচ্চাদেরকে আমরা দিনের বেলাতেও বাড়ির বাইরে বের হতে দিচ্ছি না।

এ বিষয়ে রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বীটের বীট কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, “সম্প্রতি গারো পাহাড়ে গভীর জঙ্গলে বাঘের আগমন ঘটেছে। আমরা গ্রামবাসীদের সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও সতর্ক করার জন্য মাইকিং করার বিষয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।”