“আমরা আজকে শুধু আমাদের সহপাঠীর পক্ষে দাঁড়াই নাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি মেয়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছি।”
Published : 04 Mar 2024, 06:52 PM
ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন তারই এক ছাত্রী।
ওই শিক্ষকের বিচার চেয়ে সোমবার বেলা ১১টায় প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
পরে বেলা ১টার দিকে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী।
অভিযোগে বলা হয়, “২০১৯ সালে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, তখন থেকেই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্যার সাজন সাহা আমাকে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ দিতেন। প্রথম দিকে একটু খটকা লাগলেও আমি এড়িয়ে গেছি, ভেবেছি স্যার মনে হয় আমাকে স্নেহ করেন, তাই মেসেজ দেন।
“২০২১ সালের নভেম্বরের ২৬ তারিখ রাত ১টা ৩৩ মিনিটে স্যার আমাকে মেসেজে দেন, আসেন চা খাই। আমি উত্তরে বললাম, স্যার অবশ্যই এনিটাইম (ফরমালি)। উনি রিপ্লাইয়ে বললেন, আমি যদি বলি এখনই? আমি উত্তরে বললাম, এখন তো পসিবল না স্যার অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।"
শিক্ষকের ‘অনৈতিক’ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বিপদ নেমে আসে দাবি করে ওই শিক্ষার্থী দাবি করেন, তাকে অনুপস্থিত দেখানোর কারণে পরীক্ষায় বসতে গুনতে হয় জরিমানা। নম্বর কমে যায় পরীক্ষার খাতায়, থিসিস পেপার আটকে দেওয়াসহ আরও অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
এসব কাজে মানব সম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেও ওই ছাত্রী অভিযোগে বলেছেন।
ভুক্তভোগীর ভাষ্য, তিনি শুভ্র স্যারকে মৌখিকভাবে তাকে হয়রানির কথা জানান, তিনি সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য তাকে একাধিক শর্ত দেন।
এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হলে ‘নির্যাতনের শিকার’ অনেক শিক্ষার্থী মুখ খুলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
দাবিগুলো হল- অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা, অপরাধের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অবিলম্বে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা, ভবিষ্যতে এ ঘটনার কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন করা।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া মানব সম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী জিনিয়া জাফরিন বলেন, “আমরা আজকে শুধু আমাদের সহপাঠীর পক্ষে দাঁড়াই নাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি মেয়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। যেখানে আমার সহপাঠী নিরাপদ না সেখানে কোন মেয়েই নিরাপদ না।”
একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ শাওন বলেন, "আমরা এ রকম জঘন্য শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার চাই। শুধু তাই-ই নয়, আদালতের মাধ্যমে তার অপরাধের বিচার করতে হবে।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাজন সাহার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে তাকে একাধিকবার কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
সাজন সাহাকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আপনার বিরুদ্ধে? এমন প্রশ্নে মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র বলেন, “অভিযোগ করলেই তো হবে না, এর সত্যতা প্রমাণ করতে হবে।”
পুরো ঘটনাটিকে বিব্রতকর উল্লেখ করে উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেছেন, “আমার কাছে এক ছাত্রী এসেছিল, সে মানব সম্পদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমি তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”