Published : 29 May 2024, 02:29 PM
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিয়ে ব্যালট পেপারে সিলমারা ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেছেন এক ছাত্রলীগ নেতা।
উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মিশুক বুধবার সকাল ৮টায় দক্ষিণ চরসাহাভিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে এ ঘটনা ঘটান।
মিশুক দোয়াত-কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটনের এজেন্ট বলে জানা গেছে।
ফেইসবুকে এ ছাত্রলীগ নেতার পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, তিনি দোয়াত-কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটনকে এবং টিউবওয়েল প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাখাওয়াতুল হক বিটুকে ভোট দিয়েছেন।
পোস্ট করা ওই ছবির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে- 'আলহামদুলিল্লাহ’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা মিশুক বলেন, “ভোট দিয়ে খুশিতে ছবি পোস্ট করেছি।”
ব্যালটের ছবি এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা আইনগতভাবে ঠিক কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ভুল করেছি, ছোট ভাই হিসেবে মাফ করে দিয়েন।”
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, “আমি ঘটনাটি সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা এবং ওই ভোটার যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন, সেই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে বলেছি।”
কোনো ভোটার এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যালটের সিল দেওয়া ছবি প্রচার করতে পারেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সোনাগাজী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা বলেন, “ঘটনাটি জানার পর নির্বাহী ম্যাজিট্রেটকে অবহিত করা হয়। তিনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা, সেটা জানা নেই।”
ছাত্রলীগ নেতা মিশুক যার নির্বাচনি এজেন্ট, সেই দোয়াত-কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, “আমি এ ধরনের কোনো বিষয়ে অবগত নই। আমি কিছু জানিও না।”
২ ঘণ্টায় একটি ভোটও পড়েনি
এদিকে সোনাগাজী উপজেলায় একটি কেন্দ্রের তিন বুথে দুই ঘণ্টায় একটিও ভোট পড়েনি। উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুজাপুর আর এম হাট কে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ফেনীর তিনটি উপজেলায় বুধবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
সকাল ১০টায় সুজাপুর আর এম হাট কে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রে তেমন ভোটার উপস্থিতি নেই। কেন্দ্রটির মোট ১০টি বুথের মধ্যে দুই ঘণ্টায়ও তিনটি বুথে কোনো ভোট পড়েনি। অন্য সাতটি বুথে ১৮টি ভোট পড়েছে।
ভোটার না থাকায় ওই কেন্দ্রে অলস সময় পার করছেন ভোটগ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আবু সায়েম বলেন, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ১৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ছয়টি ও নারীদের জন্য চারটি বুথে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
“সকালে ভোটারের উপস্থিতি কম। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা করছি।”
এদিকে আর এম হাট কে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মতো প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে উপজেলার অন্য অনেক কেন্দ্রে।
নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
জাল ভোট দেওয়ায় আটক ১৭
এদিকে জাল ভোটে সহযোগিতা ও জাল ভোট দেওয়ায় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ ১০ জনকে আটক করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (কুমিল্লা অঞ্চল) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ফেনী সদর উপজেলায় পিটিআই কেন্দ্রে জালভোট দেওয়ার সময় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও একজন পোলিং এজেন্টকে আটক করেছেন।
এ ছাড়া ফেনী সদরে সরকারি বালিকা কেন্দ্রে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
দাগনভূঞা উপজেলার গজারিয়া কেন্দ্রে মারুফ হোসেন (১৮) ও সোনাগাজী উপজেলার রাজাপুর মাস্টার মুজিবুল হক একাডেমি কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অপরাধে আরও একজনকে আটক করা হয়েছে।
সকাল থেকে ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে। ফেনী সদরে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সোনাগাজী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে চারজন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আর দাগনভূঞা উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী থাকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।