মাঠে গিয়ে বিষয়টি দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন বাঘাবাড়ি মিল্কভিটার উপ-মহাব্যবস্থাপক।
Published : 20 Dec 2024, 12:04 PM
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় মিল্কভিটার গো-চারণ ভূমির প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে ঘাস চাষের পরিবর্তে শসার আবাদ করা হচ্ছে।
স্থানীয় দুগ্ধ খামার সমিতি ও কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে মিল্কভিটার নামে সরকারিভাবে বরাদ্দের এসব জমি ইজারা নিয়ে কৃষকরা শসা চাষ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বৃ-আঙ্গারু এলাকায় এমন ঘটনায় শসা চাষিরা লাভবান হলেও গো-চারণ ভূমি কমে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন খামারিরা।
বাঘাবাড়ি মিল্কভিটার উপ-মহাব্যবস্থাপক বলছেন, মাঠে গিয়ে বিষয়টি দেখার সুযোগ নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই এলাকার জাবেদ সরকার বলেন, বৃ-আঙ্গারু গ্রামের প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী একটি সমবায় সমিতির সভাপতি হাজী আব্দুল লতিফ ও আরেকটির ব্যবস্থাপক তাহেজ আলীর কাছ থেকে প্রতি বিঘা জমি বার্ষিক চুক্তিতে ইজারা নিয়ে শসা চাষ করছেন তিনি।
সরকারিভাবে বরাদ্দ গো-চারণ ভূমি ইজারা নিয়ে অন্য ফসল চাষের নিয়ম আছে কি না জানতে চাইলে আরেক কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, “আমরা এতো কিছু জানি না, টাকার বিনিময়ে জমি নিয়ে শসা চাষ করছি। যারা ইজারা দিয়েছে তারা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।”
আরেক শসা চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মিল্কভিটার আওতাধীন গো-চারণ ভূমির প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে শসা চাষ হচ্ছে। সবাই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব জমি ইজারা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে বৃ-আঙ্গারু সরকারপাড়ার প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক তাহেজ আলী বলেন, “শুনেছি বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বাৎসরিক চুক্তিতে সমিতির সভাপতি শসা চাষিদের কাছে গো-চারণ ভূমির জমি ইজারা দিয়েছেন। এসবের সাথে আমি জড়িত নই।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দক্ষিণ বাঙ্গালপাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হাজী মো. লতিফ বলেন, “কোনো শসা চাষিকে গো-চারণ ভূমি ইজারা দেওয়া হয়নি।”
মিল্কভিটার গো-চারণ ভূমিতে শসার চাষ হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি মিল্কভিটার উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. ছাইদুল ইসলাম বলেন, “ঘাস চাষের জন্য গো-চারণ ভূমির প্রতি একর দুই হাজার টাকার বিনিময়ে খামারিদের মাঝে বার্ষিক ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এখানে অন্য কোনো ফসল আবাদ করার নিয়ম নেই।”
তবে মাঠে গিয়ে বিষয়টি দেখারও কোনো সুযোগ নেই দাবি করে তিনি বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লিটুস লরেন্স চিরাং বুধবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গরুর খামারিদের মাঝে সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া চারণ ভূমিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অন্য ফসল আবাদের কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি অন্য কাউকে ইজারা দেওয়ারও নিয়ম নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শাহজাদপুর উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়া, দখলবাড়ি, রামকান্তপুর, হাড়নি, রাউতবাড়ি, পশ্চিম খারুয়া, নাগডেমরা, বিলচান্দ, বৃ-আঙ্গারু ও রতনপুর এই মৌজাগুলোর আওতায় বিল এলাকায় এক হাজার ১৭৯ দশমিক ৮৩ একর সিএস খতিয়ানভুক্ত সরকারি খাস জমি আছে।
তৎকালীন জমিদার গগেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমেরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবেন্দনাথ ঠাকুর জমিগুলোর দখলদার ছিলেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের নামে এসব জমি এসএ খাস খতিয়ানভুক্ত হয়।
১৯৮২ সালে ওইসব জমির মধ্যে থেকে এক হাজার ৩০ একর খাস জমি গেজেট আকারে গো-চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহারের জন্য মিল্কভিটার অনুকূলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ইজারা দেয়।
সমবায় মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং মিল্কভিটার প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত কমিটি গো-চারণ ভূমিগুলো মিল্কভিটার তালিকাভুক্ত প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির নামে বাৎসরিক ইজারা দিয়ে আসছে।
এই গো-চারণ ভূমি গবাদি পশুর লালনপালন এবং দুধের উৎপাদন বাড়াতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।