মেহেরপুরে নৌকার ভোট না করায় নারী ইউপি সদস্যকে লাঞ্ছনা চেয়ারম্যানের

“আমি বের হতে না চাইলে চেয়ারম্যান আমাকে ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে সভাকক্ষ থেকে বের করে দেন।”

মেহেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2023, 11:41 AM
Updated : 27 Dec 2023, 11:41 AM

নৌকার পক্ষ না নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচার করায় সংরক্ষিত নারী সদস্যকে লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

বুধবার দুপুরে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন কুতুবপুর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য রহিমা খাতুন।

রহিমা খাতুন জানান, চেয়ারম্যান সেলিম রেজা মেহেরপুর-১ আসনের নৌকা মনোনীত প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের পক্ষে ভোট করছেন। আর তিনি স্বত্বন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের (ট্রাক) পক্ষে ভোট করছেন।

“সকালে ইউনিয়ন পরিষদের মিটিংয়ে চেয়ারম্যান সব সদস্যকে নৌকার পক্ষে মাঠে নামার জন্য দাঁড়িয়ে শপথ করান। এ সময় আমি দাঁড়িয়ে শপথে অংশ না নিলে চেয়ারম্যান অকথ্য ভাষায় গালি দিতে দিতে তেড়ে আসেন।

রহিমা বলেন, “এ সময় গালি দিয়ে চিৎকার করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘তুই আর তোর ভাই বাড়িতে ট্রাকের অফিস করেছিস। গ্রামে ট্রাকের পক্ষে ভোট চাচ্ছিস। তুই জাতির শত্রু, আমাদের সবার শত্রু।’ তখন উত্তরে আমি বলি, ‘চেয়ারম্যান সাহেব আপনি আওয়ামী লীগ করেন, আমিও আওয়ামী লীগ করি। নির্বাচনে আপনি নৌকা বেছে নিয়েছেন, আমি ট্রাক বেছে নিয়েছি। আপনার সমস্যা কী?’

“তখন চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন- ‘তুই মিটিং থেকে বের হয়ে যা’। আমি বের হতে না চাইলে চেয়ারম্যান আমার ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে সভাকক্ষ থেকে বের করে দেন।”

নারী ইউপি সদস্য আরও বলেন, “আমি কাঁদতে কাঁদতে সভাকক্ষ থেকে বের হয়ে ঘটনাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে বলি। এরপর তিনি ওই ঘটনার বিচার এবং নিন্দা দাবি করে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।”

এ ঘটনার বিচার চেয়ে মেহেরপুর সদর থানায় এবং নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান এই ইউপি সদস্য।

সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনাকে ‘খুবই দুঃখজনক’ উল্লেখ করে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাভলি ইয়াসমিন বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট করায় চেয়ারম্যান নারী সদস্যের গায়ে হাত তুলে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।” 

বিচার না পেলে পরিষদ ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শী ডাবু হোসেন বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের পাশের দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখি ওই মহিলা মেম্বার পরিষদ থেকে বের হয়ে কান্নাকাটি করছেন। আমরা কিছু লোক গিয়ে দেখি মেম্বার ও চেয়ারম্যান মিলে ওই মহিলা মেম্বারকে থ্রেড (হুমকি) দিচ্ছে।”

কুতুবপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রাজন আলী বলেন, “চেয়ারম্যান সাহেব সব মেম্বারকে ডেকেছিলেন নির্বাচনের বিষয়ে। এর মধ্যে ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার রহিমা খাতুনকে জিজ্ঞেস করেন- তিনি এবং তার ভাই নৌকার বিরুদ্ধে ট্রাকের অফিস করে নির্বাচন করছে কেন।

“এই নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান রহিমা মেম্বারকে বলেন, ‘তুই আর ইউনিয়ন পরিষদে আসবি না, তুই পরিষদ থেকে বের হয়ে যা।’”

মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল মান্নান (ছোট) বলেন, “এ ধরনের ঘটনা নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে উত্তেজিত করেছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে।”

সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার কঠোর বিচার চেয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বলেন, “দুপুরে পরিষদে মাসিক সমন্বয় মিটিং চলছিল। এ সময় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য রহিমা খাতুন মিটিংয়ে নানা বিষয় নিয়ে অযৌক্তিক প্রশ্ন উত্থাপন করে নিজেই চিৎকার করে উত্তেজনা ছড়ায়। তখন আমি স্বাভাবিকভাবে কথা বলার জন্য আহ্বান করলে সে মিটিং ছেড়ে বাইরে চলে যান। পরে, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “একটি মহল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে এই প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। কারণ আমি নৌকার পক্ষে ভোট করছি। আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান।”

অভিযোগ প্রসঙ্গে মেহেরপুর সদর থানার ওসি শেখ কনি মিয়া বলেন- “ঘটনাটি শুনেছি। আমি অফিসে ছিলাম না। নারী ইউপি সদস্য রহিমা খাতুন থানার ডিউটি অফিসারকে এমন একটি অভিযোগপত্র দিয়ে গেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামিম হাসান বলেন, “এই ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”