স্থানীয়রা বলছেন, ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে এই কিশোর গ্যাং সদস্যদের দৌরাত্ম অনেক বেড়েছে।
Published : 27 Apr 2025, 06:14 PM
কুমিল্লায় অস্ত্র নিয়ে কিশোর গ্যাং সদস্যদের বেপরোয়া তৎপরতায় শহরজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে শুক্রবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার দিন এক থেকে দেড়শ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য অস্ত্র নিয়ে শহরে মিছিল করে। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
স্থানীয়রা বলছেন, ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে এই কিশোর গ্যাং সদস্যদের দৌরাত্ম অনেক বেড়েছে। কিন্তু এদের নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার অভাব রয়েছে।
শুক্রবারের ওই ঘটনার পর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এরই মধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ও তাদেরকে পৃষ্টপোষকতা করে এমন ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয় বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়।
স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার ছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষার আসন পড়ে। এর মধ্যে বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নগরীর রানীর দিঘির পাড়, তালপুকুরপাড় ও আদালতপাড়া এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মিছিল করে। তাদের অনেকের হাতেই ছিল দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র। তারা যখন স্লোগান তুলে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন সড়কের দুপাশে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
এ সময় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় ভর্তি পরীক্ষা চলছিল। তার সামনের সড়ক দিয়ে রানীর দিঘির দক্ষিণপাড়ে কয়েকশ কিশোর দেশীয় অস্ত্র হাতে মিছিল করে যায়।
এ সময় আতঙ্কিত এক অভিভাবক বলেন, “মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিল, আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি। এমন সময় অন্তত ৫০০ পোলাপান হাতে চাপাতি, বটি, দা নিয়ে মহড়া দিচ্ছিল। এটা আতঙ্কের বিষয়। অথচ এখানে প্রশাসনের কোনো লোকজন নেই, প্রশাসন কোথায় গেল? এমন পরিস্থিতি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।”
তালপুকুরপাড় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিকালে এক থেকে দেড়শ কিশোর ছেনি, রামদা ও চাপাতি হাতে এলাকায় আসে এবং হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে গোটা এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আদালতপাড়া এলাকায় কিশোর গ্যাং তাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিছিল করে। এ সময় সড়কে চলাচলরত যানবাহন চালকরা ভয়ে সড়কের পাশে অবস্থান নেয়।
এ সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি সদস্য রহমত বিন হানিফ। তিনি সেই সময়ের ঘটনা বর্ণনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন।
তাতে তিনি বলেন, “ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বিএনসিসির হয়ে ডিউটি দিয়েছিলাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পরীক্ষার সময়ে বাহিরে থেকে মিছিলের শব্দ শুনতে পেলাম। শব্দ শুনে দ্রুত বাহিরে আসলাম। এসে দেখি অনেক গুলো ছোট ছোট ছেলে। তাদের বয়স সর্বোচ্চ ১৬ বছর হবে।
কুমিল্লায় কিশোর গ্যাংকে ‘অস্ত্র সরবরাহকারী’সহ গ্রেপ্তার ৯, অস্ত্র-মাদক জব্দ
কুমিল্লায় দেশি অস্ত্র হাতে কিশোর গ্যাংয়ের 'মিছিল', আটক ৩
“তাদের অনেকের হাতে রামদা, চুরি, চাপাতি দেখেছি। তারা আতশবাজিও ফোটাচ্ছিল। তাদের কাছে গিয়ে বললাম, এখানে পরীক্ষা চলছে এভাবে আওয়াজ করবেন না। তারা আমাকে তাাদের অস্ত্রগুলো দেখিয়ে আরও বেশি আওয়াজ করে ছুটে চলল। তারপর পুলিশের কাছে যখন এই ব্যাপারে বললাম, তারা এই ব্যাপারে একটুও মাথা ঘামালো না।”
এ দিনের ঘটনা দেখে আতঙ্ক ও ক্ষোভে এক অভিভাবক বলছিলেন, “আমার সন্তান ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছে, আর এমন আতঙ্কজনক পরিস্থিতি দেখে আমরা চিন্তায় পড়ে গেছি। প্রশাসন কী করছে?”
এ ব্যাপারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিন ইশরাক মিজার বলেন, “৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে কুমিল্লা শহরে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে। এক্ষেত্রে কুমিল্লার প্রশাসনের নীরবতা এর প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি। কেননা, এরকম ঘটনা এখন প্রায়শই ঘটছে কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যাবস্থা নিচ্ছে না।
“মাঝেমধ্যে দু-একজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু তারা আবার কিছুদিন পর ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে তারা পুরোপুরি নাগালের বাইরেই রয়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এ শহর আরো অনিরাপদ হয়ে উঠবে বলে আমি আশঙ্কা করি।”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আব্দুল হাকিম বলেন, “আমি এই ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। উনারা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।”
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, “শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের মহড়ার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযানে নেমে পড়ে। এ সময় একটি গ্রুপের মহড়ায় ধাওয়া করে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিরা পালিয়ে গেছে।
“তাদের কাছ থেকে ছুরি, চাকু এন্টি কাটার উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের অভিযান চলছে। ভিডিও দেখে চিহ্নিত করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হবে।”