গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর গির্জার সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
Published : 15 Mar 2025, 06:26 PM
গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতাল হত্যা ও ভাঙচুর, লুটপাট, বসতঘরে অগ্নিসংযোগ মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে উপজেলার সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর গির্জার সামনে আদিবাসী বাঙালী সংহতি পরিষদ, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ গাইবান্ধা ও এএলআরডি যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
সমাবেশে আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, “মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রমকে গুলি করে হত্যার পর থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ৩৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
“কিন্তু বিচার হওয়া তো দূরের কথা, মামলার আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বুলবুল আকন্দসহ অন্য আসামিদের কেউই এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হননি।”
অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার করার দাবি জানান তিনি।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, “সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ইক্ষু খামারে বসবাস করা সাঁওতালদের এক হাজার ৮৪২ একর পৈতৃক সম্পত্তি ফেরতের বিষয়ে এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অবিলম্বে তা ফেরত দিতে হবে।”
একইসঙ্গে গুলিবিদ্ধ এবং গুরুতর আহত সাঁওতালদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানান তিনি।
সমাবেশে সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির তনু বলেন, “শুধু সাঁওতালদের বসতি নয়। সম্প্রতি উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় আদিবাসী সাঁওতালদের সমাধিস্থল রাজাহার ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম দখল করেছেন। অবিলম্বে ওই সমাধিস্থল সাঁওতালদের ফেরত দিতে হবে।”
প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন, নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, এএলআরডির প্রতিনিধি আফজাল হোসেন, বিশিষ্ট আইনজীবী কুশালাশীষ চক্রবর্তী, মোহাম্মাদ আলী প্রামাণিক, মানবাধিকার কর্মী কাজী আব্দুল খালেক, আদিবাসী নেতা প্রিসিলা মুরমু, মাইকেল মার্ডি, বৃটিশ সরেন, বার্নাবাস টুডু, সুবাস মুরমু, কৃষ্ণ মুরমু প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট ফারুক কবির ও তৃষ্ণা মুরমু।
এর আগে সকালে জয়পুর গ্রামে সাঁওতাল জনবসতি উচ্ছেদের জায়গায় স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
পরে মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহত মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এছাড়া গুলিবিদ্ধ ও আহত (ক্ষতিগ্রস্ত) সাঁওতালদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ খামারে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০জন আহত হয়।
পরে পুলিশ, চিনিকল ও সাবেক সংসদ সদস্য কালামের লোকজন বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।
সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন চারজন সাঁওতাল। তাদের মধ্যে তিনজন মারা যান। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।