প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বলেন, “আমি একদিকে গেলে অন্যদিকে এসব কাজ করছে। এজন্য দুঃখিত। এরপর থেকে আমি বিষয়গুলো সংশোধন করবো।”
Published : 21 May 2024, 02:29 PM
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার একাধিক ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর সমর্থকদের প্রভাব বিস্তার, জাল ভোট, গোপন কক্ষে এজেন্টদের নজরদারির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে দোয়াত-কলম প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহজালাল মিয়া।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শাহজালাল মিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। তার বিপরীতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সুজন ইকবাল (আনারস প্রতীক) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (ঘোড়া প্রতীক)।
তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম আড়াইহাজারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
সকাল ৯টায় উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের সেন্ট্রাল করোনেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নারী ও পুরুষ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্র দুটিতে দোয়াত-কলম প্রতীকের কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। ভোটের প্রথম ঘণ্টায় কেন্দ্রটির ১০টি বুথে গড়ে ৩ থেকে ৭টি ভোট পড়েছে। তবে ১০ মিনিটের ব্যবধানে এ চিত্র পরিবর্তন হতে দেখা যায়।
৯টা ১০ মিনিটে হঠাৎ কেন্দ্রটিতে প্রবেশ করে ৩০ থেকে ৪০ জন নারী ভোটার। এ সময় ঘোড়া প্রতীকের ব্যাচধারী একজন নারী সর্থমককে প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়। তিনি ভোটারদের নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন এবং কে কোন বুথে ভোট দেবেন তা দেখিয়ে দেন। সাংবাদিকরা পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান, তার নাম তামান্না আক্তার। তিনি ছাত্রলীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেত্রী।
সকাল সাড়ে ১০টায় ৯৮ নম্বর দড়ি সত্যভান্দী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে মানুষের জটলা থাকলেও ভিতরে ভোটার উপস্থিতি কম। তবে লাইন না থাকলেও বুথগুলোতে গড়ে ৮০ থেকে ৯০টি ভোট পড়েছে।
এ সময় পুরুষ কেন্দ্রের ১ নম্বর বুথে একজনকে প্রকাশ্যে ঘোড়া প্রতীকে ভোট দিতে দেখা যায়। এর পরপরই তিনি পুনরায় ভোটের লাইনে দাঁড়ান। তার হাতের আঙ্গুলের অমুছনীয় কালি ছিল। তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ওই ভোটার বলেন, “আমি ভোট দেইনি।”
পরে কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ওই ভোটারকে বাইরে নিয়ে যান এবং কোনো আইনি ব্যবস্থা ছাড়াই ছেড়ে দেন।
প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে আরেকটি বুথে প্রবেশ করে আনারস প্রতীকের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট সাইফুল ইসলামকে গোপনে কক্ষে নজরদারি করতে দেখা যায়। পরে তাকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং সংবাদকর্মীদের এ নিয়ে সংবাদ না করার অনুরোধ করেন তারা।
কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি একদিকে গেলে অন্যদিকে এসব কাজ করছে। এর জন্য দুঃখিত। এরপর থেকে আমি বিষয়গুলো সংশোধন করবো।”
ঘটনার পর কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পথে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিদা মোশাররফের নেতৃত্বে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ঘিরে ধরেন ঘোড়া প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা। তারা এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করতে থাকেন এবং গাড়ি আটকে রাখেন।
এ সময় শাহিদা মোশাররফ বলেন, “এটি এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর এলাকার কেন্দ্র। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে তার সম্মানহানি হবে।”
এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের ‘ম্যানেজ’ করারও চেষ্টা করেন।
এদিকে সরকারি সফর আলী কলেজ কেন্দ্রে দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী মো. শাহজালাল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচনের পরিবেশ গতকাল রাত থেকে নষ্ট করছে। আজকে ভোটকেন্দ্রে কোথাও কোথাও আমার এজেন্টদেরকে বের করে দিচ্ছে। কোথাও রাস্তা থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি।
“ফতেপুর ইউনিয়ন ভোটকেন্দ্রে প্রকাশ্যে ছিল মারছে। আনারস ও ঘোড়া মার্কা দুইজন মিলে এ কাজগুলো করছে। তারা যেভাবে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছি এতে করে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ আর নেই।”
যে কেন্দ্রগুলোতে ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে সেখানেই জাল ভোট হয়েছে জানিয়ে শাহজালাল মিয়া বলেন, “প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব কিছু সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু তার এলাকায় ঘটিয়েছেন। উনার লোকবল দিয়ে এ কাজগুলো করছেন। তবে নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত আমি থাকবো।”
এসব জানতে চাইলে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, “আমি এলাকায় নেই। আমি ভোট দেওয়ার জন্য পথে আছি। কেউ আমার নাম বললেই সেটা সত্য হবে এমন নয়। আমি যতটুকু জানি নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে এবং ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটার কথা নয় এবং আমার কোনো নির্দেশনা এখানে থাকার প্রশ্নই উঠে না।”
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, “কিছু কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অনেকগুলো কেন্দ্রে এজেন্ট ছিল না। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, এজেন্ট চলে এসেছে। তবে প্রত্যেক স্থানেই আমরা ফোর্স পাঠাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।”