৩ শ্রমিকের মৃত্যু: কারখানায় একদিনের ছুটি, ওয়ালটন কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা

তিন শ্রমিকের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ বলেছে, “ওয়ালটন সবসময়ই ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ।”

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2023, 05:01 AM
Updated : 17 April 2023, 05:01 AM

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় ওয়ালটন কারখানায় ইফতারের পর মারা যাওয়া তিন শ্রমিকের পরিচয় মিলেছে। এ ঘটনায় সোমবার কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

মৃত তিন শ্রমিক হলেন– টাঙ্গাইল সদরের গোসাইর এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ আলী (৩০), একই জেলার ভূয়াপুর উপজেলার আব্দুল রশিদের ছেলে আব্দুল বারেক ওরফে বারী (২৯) এবং সিরাজগঞ্জের চৌহালী থানার কুর্কি মধ্যপাড়া গ্রামের বুদ্দু মিয়ার ছেলে ফরিদ মিয়া (২৮)।

এছাড়া আল আমিন হোসেন (২৮) নামে আরেক শ্রমিক অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায়। তিনি কারখানার পাউডার কোটিং সেকশনের অপারেটর ছিলেন।

কালিয়াকৈরে ওয়ালটন হাইটেক পার্কে রোববার ইফতারের পরপর অসুস্থ হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে অন্য শ্রমিকরা।

পরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে রাত পৌনে ১১টার দিকে যান চলাচল শুরু হয় বলে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সানোয়ার হোসেন জানান।

পরে রাতে ওয়ালটন হাইটেক পার্ক ইন্ডাস্ট্রিজ-এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, রোজা উপলক্ষে কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার কর্মী ইফতার করে থাকেন। রোববারও কারখানার ভেতরে সবার জন্য ‘স্বাস্থ্যসম্মত’ ইফতারের আয়োজন করা হয়।

“ইফতার গ্রহণের সময়ে ৫ জন শ্রমিক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মূল ডাইনিংয়ের বাইরে শরবত জাতীয় পানীয় তৈরি করে পান করেন। এর কিছুক্ষণ পর ওই ৫ জন শ্রমিকের মধ্য থেকে ৩ জন অসুস্থ বোধ করেন।

“তাৎক্ষণিকভাবে ওয়ালটনের মেডিকেল টিম তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে কারখানার নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রুত পার্শ্ববর্তী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজে নিয়ে যান।

“সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ওই ৩ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে আরেকজন শ্রমিক অসুস্থ বোধ করলে তাকেও জরুরি ভিত্তিতে উপরোক্ত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার সুচিকিৎসার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।“

তিন শ্রমিকের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ বলেছে, “ওয়ালটন সবসময়ই ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ প্রয়াত শ্রমিকদের পরিবারের পাশে আছে এবং থাকবে।

“ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ উক্ত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি কোম্পানির পলিসি অনুযায়ী কমপ্লায়ান্স মেনে (ইনস্যুরেন্স, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি) যথাযথ সুবিধাসহ তাদের পরিবারকে এর অতিরিক্ত আরো আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।”

তিন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখতে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ একটি ‘উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছে।

তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ বলছে, “এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহিরাগতরা কারখানা ও এর আশপাশে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। তবে আইন-শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপে সার্বিক পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।”

তিন শ্রমিকের মৃত্যুতে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ এক দিনের শোক ঘোষণা করেছে। সে কারণে সোমবার কারখানা বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। 

ওয়ালটন কারখানার ডেপুটি অপারেটিভ ডিরেক্টর মো. সুজন মিয়া রাতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমরা যত দূর জেনেছি, খাবারের কারণে নয়, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ওই শ্রমিকেরা মারা গেছেন।”

আর শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজি বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক রাজিব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করলে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের লাশ নিয়ে যায়। এ ছাড়া অসুস্থ একজনকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।”

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, “ইফতার খেয়ে নাকি হিটশকে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে, তা পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।”