কোনো রোগীর শরীরের অবস্থা নাজুক হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
Published : 17 Jul 2023, 11:01 PM
চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা ও অস্ত্রোপচার বন্ধ, তাই গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরমর্শ দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জের ক্লিনিকগুলো।
নিয়মিত রোগী ও অস্ত্রপচারের জন্য দিন নির্ধারিত হয়ে আছে যেসব রোগীদের, যোগাযোগ করলে তাদের বুধবার দেখা করতে বলা হচ্ছে।
সোমবার নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক ঘুরে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই উঠে এল।
রাজধানীর বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর নবজাতক ও প্রসুতির মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারাদেশে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা ও অস্ত্রোপচার বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা।
ফলে নারায়ণগঞ্জ শহরের বেসরকারি ক্লিনিকগুলো খোলা থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় সেখানে নতুন কোনো রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। বন্ধ রয়েছে অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম।
কোনো রোগীর শরীরের অবস্থা নাজুক হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকরা দুইদিন চেম্বার বন্ধ রাখায় ক্লিনিকগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০০ বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত রোগী দেখেন দেশের কয়েকশ চিকিৎসক, চলে অস্ত্রোপচারও।
বিকালে শহরের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কথা হয় নাসরিন আক্তারের সঙ্গে।
তিনি জানান, সদর উপজেলার শিবুমার্কেট এলাকা থেকে ৭২ বছর বয়সী শাশুড়ি বাছিরুন বেগমকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন। কিন্তু আসার পর জানতে পারলেন কোনো চিকিৎসকই নেই।
তিনি বলেন, “বাকি কোনো হাসপাতালেও নাকি ডাক্তার নাই। এতদূর থেইকা আসছি। আগে জানলে তো আর এই হয়রানিতে পড়তাম না।”
দুইটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসেছেন আব্দুর রহমান। হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে চিকিৎকের কাছে এসেছিলেন তিনি। কোথাও দেখাতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরার জন্য রিকশা খুঁজছিলেন।
বললেন, “সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ডাক্তার দেখাইতে আসছিলাম। দুই দিন যাবত বুকে খুব ব্যাথা, ডাক্তার দেখান দরকার ছিল। শুনলাম আজ কোথাও ডাক্তার বসবে না। তাই চলে যাচ্ছি।”
চাষাঢ়ার কেয়ার জেনারেল হাসপাতালের কাউন্টার ম্যানেজার খন্দকার মেহেদী হাসান জানান, তাদের হাসপাতালে নিয়মিত তিনজন জেনারেল সার্জন, পাঁচজন গাইনি সার্জন, একজন অর্থপেডিক সার্জন এবং একজন ইএনটি সার্জন চিকিৎসা সেবা দেন। তবে সারাদেশে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তারা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে দুইদিন তারা সেবা দিতে পারবেন না।
“সাধারণত প্রতিদিন এই হাসপাতালে ১০-১২টি অস্ত্রোপচার হয়। তবে সোমবার অপারেশন থিয়েটার বন্ধ। বর্হিবিভাগের চিকিৎসা সেবাও বন্ধ। তাই আমরা নতুন রোগী ভর্তি নিচ্ছি না। যাদের অস্ত্রোপচারের ডেট ছিল তাদেরও ডেট পরিবর্তন করে বুধবার দেওয়া হয়েছে। পিত্তথলির অপারেশন হওয়া এক রোগীর সেলাই কাটার কথা ছিল আজ। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাকেও বুধবার আসতে বলা হয়েছে।”
ডন চেম্বার এলাকার মেডিহোপ হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টির সেন্টারে গিয়ে দেখা গেল, প্যাথলজি বিভাগ ছাড়া বাকি সব কার্যক্রম বন্ধ।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মো. ফয়সাল বলেন, “হাসপাতালে কয়েকজন রোগী ভর্তি আছেন। যাদের সেবা দেওয়ার জন্য জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক রয়েছেন। তবে নতুন কোনো রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না।”
একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জের বেসরকারি সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কোনো রোগী এলে বুধবার যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।
সব প্রতিষ্ঠানই বলছে, চিকিৎসকরা দু’দিন সেবা বন্ধ রাখায় আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। দু’দিন রোগী না দেখার চাপ গিয়ে পড়বে বুধ ও বৃহস্পতিবার।
অন্যদিকে তুলনামূলক চাপ বেড়েছে নারায়ণগঞ্জের সরকারি দুটি হাসপাতালে।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাশার জানান, রোগীর চাপ সামাল দিতে আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল তাদের। বিকেলের পর থেকে সব বিভাগে একজনের বদলে দুজন করে চিকিৎসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জরুরি বিভাগেও দুজন চিকিৎসক রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতাল খোলা থাকবে। রোগীরা যেন কাঙ্ক্ষিত সেবা বঞ্চিত না হন সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
একই ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শেখ ফরহাদও।