সাধারণত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ও ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে পাখির জীবন-ধারণ কঠিন হয়ে পরে।
Published : 28 Apr 2024, 12:53 AM
নেত্রকোণার মদনে দাবদাহের মধ্যে এক সাংবাদিকের বাসায় ওড়ে আসে বনের তৃষ্ণার্ত ঘুঘু। পানি খেয়ে তৃষ্ণা মিটিয়ে তৎক্ষণার্থ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে পাখিটি।
শনিবার দুপুরে দৈনিক ভোরের কাগজের মদন উপজেলা প্রতিনিধি পরিতোষ দাসের বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
পরিতোষ দাস বলেন, “দুপুরে আমি বাসাতেই ছিলাম। আমাদের এলাকাটি হাওর এলাকা। বর্তমানের দাবদাহের মধ্যে বাইরে রোদ। অসহনীয় গরম। হঠাৎ এক তৃষ্ণার্থ ঘুঘু বাসার ভিতরে চলে আসে।
পাখিটি ছটফট করতে করতে পানির খোঁজ করছিল।
“পাখিটি গরমে তৃষ্ণার্থ বুঝতে পেরে আমি পাখিটিকে দ্রুত একটি পাত্রে পানি দিই। পাখিটি কিছুটা পানি খাওয়ার পরপরই ঝিমিয়ে পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। খুবই খারাপ লাগছিল, পাখিটির জন্য।
পরিতোষ বলেন, “বাসায় মুহূর্তে এক শোকের পরিবেশ হয়ে যায়। আমার পরিবারের সবাই খুবই কষ্ট পেয়েছে। বর্তমানের দাবদাহের মধ্যে পাখিও নিরাপদে নেই। তাই আজ বাসার বিভিন্ন স্থানে পাখিদের খাওয়ার জন্য পাত্রে পানি রেখেছি।”
নেত্রকোণা ইন্সস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির প্রশিক্ষক, পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ মো. রুবেল হোসেন বলেন, পাখিদের শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত মানুষের শরীরের তাপমাত্রা থেকে একটু বেশি থাকে ফলে অত্যাধিক গরম আবহাওয়া মানুষের চেয়ে পাখির জন্য বেশি ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এমনকি হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও মানুষের থেকে বেশি।
সাধারণত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ও ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে পাখির জীবন-ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে পাখির হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পাখিটি অনেক কারণেই মারা যেতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “
বর্তমান আবহাওয়ারর পরিপ্রেক্ষিত হিট স্ট্রোকে মারা যেতে পারে। এছাড়াও অত্যাধিক গরমের জন্য হার্ট ফেইল করতে পারে, অত্যাধিক ঘামের জন্য ইলেট্রলাইটের ভারসাম্যহীনতার জন্য কিংবা ডিহাইড্রেনেশনের জন্য এমনটি হতে পারে।”
তিনি বলেন, “এ অবস্থা থেকে নিস্তারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। আবহাওয়া ঠান্ডা রাখার জন্য বেশি বেশি গাছ লাগানো দরকার, পাখিদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা করা দরকার। এছাড়া স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে আমরা বিভিন্ন গাছে পাখির কৃত্রিম বাসা তৈরি করতে পারি যা তাদের অত্যাধিক গরমে আশ্রয় দেবে। এসব ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারের উচিত এলাকাভিত্তিক পাখির অভয়ারণ্য তৈরি করে পাখি রক্ষা করা।”
নেত্রকোণা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মামুন জানান, গত কয়েকদিন ধরে জেলায় ৩৫ ডিগ্রি থেকে ২৭ ডিগ্রি নাগাদ তাপমাত্রা উঠানামা করছে।
শনিবার ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল। তবে জেলার হাওরাঞ্চলে তাপমাত্রা একটু বেশি।
সেকারণে জেলার অন্য এলাকার তুলনায় সেখানে গরমও একটু বেশি। আগামী ২ মে এর পর থেকে জেলায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন তিনি।