“ঈদের আগে আরও কয়েকটি ফেরি বাড়ানো দরকার।”
Published : 11 Jun 2024, 01:57 PM
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ দিয়ে ঈদে ঘরমুখো মানুষ এবং পশুবাহী ট্রাক পারাপার ‘সহজ করতে’ উদ্যোগ নিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতি ঈদে দুই ঘাটে ফেরি স্বল্পতা ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে যানজট লেগেই থাকতো। ফলে যাত্রী পরিবহন ও পশুবোঝাই ট্রাকগুলো পথেই আটকে থাকত ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে এখন আর চিরচেনা সেই যানজট নেই। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই ফেরিতে সরাসরি যানবাহন উঠতে পারে; যাত্রীরাও গন্তব্যে পৌঁছায় ভোগান্তি ছাড়াই।
দুই ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও ঈদযাত্রায় অন্য সময়ের চাইতে গাড়ি আর যাত্রীর চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং দুর্ভোগ কমাতে দৌলতদিয়ায় তিনটি ঘাট ও ১৮টি ফেরি প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন।
এ ছাড়া যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে ‘কঠোর নজরদারি’ থাকবে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ব্যবস্থাপক সালাহউদ্দিন বলেন, “ঈদ উপলক্ষে আমাদের যথেষ্ঠ প্রস্তুতি রয়েছে। দৌলতদিয়ায় সাতটি ঘাটের মধ্যে তিনটি ঘাট সচল রয়েছে। পাশাপাশি ৬ নম্বর ঘাটও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যদি যানবাহনের চাপ বাড়ে, তাহলে ৬ নম্বর ঘাটও চালু করা হবে।
“স্বাভাবিক সময়ে দেড় থেকে দুই হাজার যানবাহন এই নৌপথ দিয়ে পারাপার হয়ে থাকে। যানবাহনের চাপের ওপর নির্ভর করে ফেরি চালানো হয়; কখনও ৮টা, কখনও ১০টা করে।”
ঈদ উপলক্ষে যানবাহনের চাপ দুই-তিনগুণ বেড়ে যায় জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “যে কারণে ফেরি পারাপারে যেন কোনো যানবাহন আটকে না থাকে সেজন্য এই নৌপথের ১৮টি ফেরিই প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে যে ফেরিগুলোর যান্ত্রিক ক্রুটি ছিলো, সেগুলোও মেরামত করা হয়েছে। এ ছাড়া ঈদের তিন দিন আগে ও তিন দিন পর পচনশীল পণ্যবাহী ছাড়া সব ধরনের ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে।”
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের এ কর্মকর্তা বলেন, “পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এ নৌপথে ভোগান্তি নেই। আশা করছি, তিনটি ঘাট ও ১৮টি ফেরি দিয়ে সেতু চালুর পর গত কয়েকটি ঈদের মত ভোগান্তি ছাড়াই এই নৌপথ ব্যবহারকারী যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবোঝাই ট্রাক ও পশুর ট্রাক ভালোভাবে পারাপার করতে পারব।”
“অন্যান্য বছরের মত এ বছরও পশুর ট্রাকের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্রাক ঘাটে আসা মাত্রই ফেরির টিকেট ও ফেরিতে উঠে চলে যেতে পারবে।”
দৌলতদিয়া ঘাটে কথা হয় ঝিনাইদহ থেকে ছেড়ে আসা ট্রাক চালক মো. আকরাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু চালুর আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো; এখন ফেরি বসে থাকে গাড়ির জন্য। সেতু চালুর পর যানজট নেই, কোনো ভোগান্তিও নেই।
“ভোগান্তি আরও থাকবে না; কারণ ঈদের তিন দিন আগে ও পরে ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে। তবে ঈদের আগে আরও কয়েকটি ফেরি বাড়ানো দরকার।”
রমজান মোল্লা নামে আরেক ট্রাক চালক বলেন, “ফেরি বাড়াতে হবে; সেই সঙ্গে পদ্মায় পানি বাড়ার কারণে পন্টুন ডুবে যাচ্ছে সেগুলোও মেরামত করা দরকার। এইগুলো না করা হলে ঈদে ভোগান্তি হতে পারে।”
ঢাকাগামী যাত্রী প্রদীপ্ত চক্রবর্ত্তী কান্ত বলেন, “পদ্মা সেতুর পর এই নৌপথে কোনো ভোগান্তি নেই। ঈদযাত্রায় প্রতিবছরই কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন ভোগান্তি কমাতে। আসন্ন ঈদযাত্রায় আমার মনে হয় আরও কয়েকটি ফেরি বাড়ানো দরকার।
“কারণ ঈদের আগে-পরে যানবাহনের একটা চাপ থাকে। সেই সঙ্গে পশুবোঝাই ট্রাকেরও একটা চাপ থাকে।”
আরেক যাত্রী শরিফুল ইসলাম বলেন, “এখন কোনো ভোগান্তি নেই এই ঘাটে। এটা পদ্মা সেতু চালুর সুফলে হয়েছে। আশা করছি, গত ঈদের মত এবারও কোনো ভোগান্তি হবে না।
“আমরা ভোগান্তি ছাড়াই ঈদে বাড়ি ও ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে পারব।”
ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, গতবারের মত এবারও আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি থাকবে। বিশেষ করে যেসব যাত্রী ফেরি বা লঞ্চে পার হয়ে দৌলতদিয়ায় এসে নতুন করে যাত্রা শুরু করবে তাদের জন্য প্রস্তুতিটা মূলত বেশি।
এ ছাড়া ঈদের সময় ঘাট এলাকায় বেড়ে যায় বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা। অজ্ঞান পাটি, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে অনেক যাত্রী।
তিনি বলেন, “পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষ যাতে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য ঘাট এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”