বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রথমবার ৬ কুমির ছানার জন্ম

বিমানবন্দর থেকে জব্দ করা চারটি ’গ্রিভেট মাঙ্কি‘সাফারি পার্কের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সাফারি পার্কের কুমির বেষ্টনী

গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রথমবারের মতো ছয়টি কুমির ছানার জন্ম হয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ছানাগুলোর জন্ম হলেও পার্ক কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, পার্ক প্রতিষ্ঠার পর বেশ কয়েকবার কুমির ডিম দিলেও তাতে ছানা ফুটেনি। তবে আশার আলো দেখা যায় গত ডিসেম্বরে। লোনাপানির একটি কুমির ডিমে তা দিলে তাতে ছয়টি ছানার জন্ম হয়।

পার্কের কুমির বেষ্টনীতে ছানার জন্ম হওয়া সত্যিই আনন্দের। জন্মের পর পরই ছানাগুলো বেষ্টনীর জলাধারে নেমে যায় বলেও জানান তিনি।

সাফারি কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্কে বর্তমানে ১০টি লোনাপানির কুমির ও ছয়টি মিঠাপানির কুমির রয়েছে। যা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা।

জানা যায়, বাংলাদেশে লোনাপানির কুমির এখন প্রায় দেখাই যায় না। মাঝে মধ্যে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশে দেখা যায়।

২০১৫ সালে  প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইইউসিএন) বাংলাদেশে লোনাপানির কুমিরকে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে এ প্রজাতির কুমির সংরক্ষিত। 

লোনাপানির কুমির মাংসাশী শিকারি। এদের লেজ পেশীবহুল। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ কুমিরের দৈর্ঘ্য পাঁচ-সাত মিটার, ওজন হয় ৪০০-১০০০ কেজি, স্ত্রী কুমির অনেক ছোট, দৈর্ঘ্য তিন মিটার। এদের পায়ের পাতায় পাঁচটি করে আঙ্গুল থাকে। চোখে নেত্রপল্লব থাকে।

সাধারণত উপকূলীয় এলাকার অল্প লবণাক্ত পানি এবং নদী মোহনায় এদের বসবাস। বাংলাদেশে সুন্দরবনের নদীগুলো লোনাপানির এসব কুমিরের একমাত্র আবাসস্থল।

লোনা পানির কুমির মিঠাপানির কুমিরের চেয়ে হিংস্র হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে মাছ, সাপ, বিভিন্ন উভচর প্রাণী, বানর, হরিণ, এমনকি মানুষও শিকার করতে পারে।

এ জাতের কুমিরের জীবনকাল সাধারণত ২৫ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত হয়। তবে ১০০ বছর বেঁচে থাকার রেকর্ডও এ কুমিরের রয়েছে। সাধারণত ৮ বছর বয়সে এ কুমির প্রজননক্ষম হয়। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে পুরুষ কুমিরের ১৬ বছর এবং মেয়ে কুমিরের অন্তত ১২ বছর লাগে। 

একেকবারে একটি কুমির ৩০ থেকে ৪০টি ডিম দেয়। বাচ্চা ফুটে বের হতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। বাচ্চা ফোঁটাতে ন্যূনতম ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। 

মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে ডিম বেশি তাপমাত্রা পায় তা থেকে পুরুষ ছানার জন্ম হয় আর কম তাপমাত্রা পাওয়া ডিম থেকে মেয়ে কুমিরের জন্ম হয়।

তবে ছয়টি ছানার জন্ম হলেও কতগুলো টিকে থাকবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “আমরা প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরগুলোকে খাবার হিসেবে মুরগী দিয়ে থাকি। ছানাগুলো জন্মের পর জলাধার থেকেই খাবার গ্রহণ করছে ছানাগুলো। জলাধার থেকে শেওলা ও ছোটমাছ খাবার হিসেবে গ্রহণ করছে তারা।”

বিমানবন্দরে জব্দ ৪ গ্রিভেট মাঙ্কি সাফারি পার্কে

এদিকে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জব্দ করা চারটি ’গ্রিভেট মাঙ্কি‘ গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকালে বানরগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার বনবিভাগের বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসিম মল্লিক।

তিনি জানান, মালি থেকে এ বানর চারটি বনবিভাগের অনাপত্তিপত্র ছাড়াই বগুড়ার জনৈক আবু বকর সিদ্দিকের ঠিকানায় বুকিং করে পাঠানো হয়েছে। রোববার বিমানবন্দরের কাস্টম বিভাগ অবৈধভাবে আসা বানরগুলো জব্দ করে পরদিন বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। বানরগুলোর বয়স তিন-চার মাস হবে।

জানা যায়, গ্রিভেট প্রজাতি বিশ্বের প্রাচীনতম বানরের জাতের একটি। এগুলো ইথিউপিয়া, জিবুতি, সুদান, ইরিত্রিয়া প্রভৃতি দেশে দেখা যায়। এ বানরগুলোর মুখমন্ডলের পাশে লম্বা সাদা চুলের গোছা থাকে। মুখের চোখের উপরে সাদা রেখা রয়েছে। এটির গালে লম্বা, সাদা কাঁটা রয়েছে।

এই প্রজাতির বানরের মুখের ত্বক, হাত এবং পা কালো। পিছনের পশম জলপাই রঙের, সামনের অংশ সাদা। পেটের ত্বকে একটি নীল আভা রয়েছে।

পুরুষ বানরের দৈর্ঘ্য ৪৯ সেমি (১৯ ইঞ্চি) এবং মাদি বানরের ৪২.৬ সেমি (১৬.৮ ইঞ্চি)। পুরুষ বানরের লেজের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০-৫০ সেমি (১২-২০ ইঞ্চি)। এ জাতের পুর্ণবয়স্ক পুরুষ বানরের ওজন হয় চার-আট কেজি এবং মাদি বানরের ওজন সাড়ে তিন থেকে-সাড়ে পাঁচ কেজি হয়ে থাকে।

এরা দলবদ্ধভাবে বনে বসবাস করে। এরা ফল-মূল, লতা-পাতা জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে। সামনের পা দুইটি পেছনের পা অপেক্ষা বড় থাকে এবং তা দিয়ে গাছে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে।

এদের গড় আয়ু ১৫-২০ বছর। এক বছরের মধ্যে তারা পূর্ণবয়স্ক হয় অর্থাৎ প্রজননক্ষম হয়। বছরে ১-২টি করে বাচ্চা প্রসব করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বানরগুলো হস্তান্তরের কথা স্বীকার করে বলেন, এগুলোকে পার্কে কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে।