উপাচার্যের কাছে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
Published : 19 Sep 2024, 02:33 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হত্যার ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ উল্লেখ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী।
বুধবার রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যায়।
সেখানে উপাচার্যের কাছে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
অর্থনীতি বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতাকে দুই দফায় গণপিটুনি দেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। বিচারবহির্ভূত যেকোনো হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা। কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তি দেওয়া হোক।”
এর আগে বুধবার বিকালে ক্যাম্পাসে একদল শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে আহত করেন।
শামীম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া এলাকার মোল্লাবাড়ীর ইয়াজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার বিকালে শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটকসংলগ্ন একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে মারধর করেন।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় তাকে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে যায়। পরে প্রক্টরিয়াল টিমের খবরে আশুলিয়া থানা-পুলিশের একটি দল নিরাপত্তা শাখায় আসে।
এ সময় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম শামীমকে ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাকে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
আহত শামীমকে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বুধবার রাত ১০টার দিকে সেখানে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক মো. আবু বকর সিদ্দিক।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিমুজ্জামান বলেন, “তাকে পৌনে ১০টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা করে জানতে পারি, উনি মারা গেছেন। মূলত উনি আগেই মারা গিয়েছিলেন।“
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “প্রক্টর অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তাকে আশঙ্কাজনক মনে হয়নি। এমনকি তিনি নিজে হেঁটে পুলিশের গাড়িতে উঠেছেন। এরকম আসামিকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করার বিষয়টি 'রহস্যজনক'।”
“নিশ্চিত না হয়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত বলে মনে করছি না”- যোগ করেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে’র প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারেও বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া মঞ্চ থেকে এই মিছিলটি বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা খুবই ন্যাক্কারজনক। আমরা সবসময় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার যে শাসন কাঠামো তৈরি করেছিল সেটা পরিবর্তন করতে চেয়েছি আর সেটার সব থেকে বড় উদাহরণ হতে পারতো গতকালকে (বুধবার) যাকে মারা হলো তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া।
“কিন্তু এখানে আমরা দেখতে পাই- একটা গোষ্ঠী খুবই পরিকল্পিতভাবে মব জাস্টিসের মাধ্যমে শামীম মোল্লাকে প্রহার করে এবং পরবর্তীতে পুলিশের হেফাজতে তার মৃত্যু হয়।”
তিনি বলেন, “এই ঘটনায় ভিডিও, ছবি এবং সিসিটিভি ফুটেজসহ যত প্রমাণ আছে সবকিছুকে আমলে নিয়ে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা করতে হবে।"
আরেক সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, "গণ আন্দোলনের পরে আমরা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পতন ঘটাতে সক্ষম হইনি। ফ্যাসিবাদী আমলে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ইত্যাদি ট্যাগ দিয়ে যে কাউকে প্রাণহরণ করা যেত, গুম করা যেত, মানবেতরভাবে আটকে রাখা যেত, আয়নাঘরে লুকিয়ে রাখা যেত। ট্যাগগুলো থাকলে মানুষ হিসেবে আর কোনো মূল্য থাকত না।"
"গতকালকে (বুধবার) আমরা দেখেছি শামীম মোল্লা যিনি সত্যিকার অর্থে সন্ত্রাসী ছিলেন, এটা কোনো ট্যাগ নয়- তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে পুলিশে হেফাজতে দেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আজকে এই ঘটনাগুলো ঘটবে কিছুদিন পর যাকে তাকে ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে পুনরায় তার অধিকার হরণ করা হবে। আমরা আবারও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের নতুন ধরনের রুপায়ন দেখতে পাব।"
আগের সংবাদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা