কুড়িগ্রামে এক টাকার রেস্টুরেন্টে মিলবে পেট পুরে পছন্দের খাবার

বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন এই রেস্টুরেন্ট চলবে। তবে বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে প্রতিদিন তা চালানো সম্ভব, জানালেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2023, 07:52 AM
Updated : 27 Jan 2023, 07:52 AM

রেস্টুরেন্টের মেন্যুতে আছে বিরিয়ানী, পোলাও, ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, কোমলপানীয়সহ ১২ পদের খাবার। মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের সেই আধুনিক রেস্টুরেন্টে বসে পেট পুরে পছন্দের এসব খাবার খেতে খরচ হবে মাত্র এক টাকা!

অসহায়, দারিদ্রপীড়িত মানুষের জন্য এমন ব্যতিক্রমী রেস্টুরেন্ট এবার চালু হয়েছে কুড়িগ্রাম সদরের হলোখানা ইউনিয়নের চরসুভারকুঠি গ্রামে। ঢাকা, কক্সবাজারের পর কুড়িগ্রামে এই ‘এক টাকার রেস্টুরেন্ট’ চালু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

বৃহস্পতিবার সেই রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে ছকিনা বেগম বলেন, “নাতি-নাতনি, বিয়াইন, বোনসহ এক টাকার রেস্টুরেন্টে আসছি। হামরা গ্রামের মানুষ কোনো দিন চিন্তা করতে পারি নাই যে রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খামো। আজকে এক টাকায় পেট ভরে খেতে পেরে সবাই খুশি হয়েছে।”

সত্তরোর্দ্ধ বৃদ্ধা কাশেম আলী বলেন, “বাবা মোর বয়স মেলা হইছে। কোনো দিন টাকার অভাবে বড় বড় হোটেলে খাবার খেতে পারি নাই।  চা-বিস্কুট পাঁচ টাকা দিয়ে খাইছি। এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সেটাও হয় না।

“কিন্তু বউসহ এসে এক টাকায় এমন দামী খাবার খেতে পারবো ভাবতেই পারিনি। এক টাকায় মন মতো খেতে পেরে খুব খুশি হয়েছি বাবা।”

আরেক সুবিধাভোগী বুলবুলি আক্তার বলেন, “বাচ্চা নিয়ে এসেছি এক টাকার হোটেলে। ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, সালাদ, ফল, মিষ্টি খেলাম। কামলা দেয়া সংসারে শহরের হোটেলে গেলে কম করে হলেও চাঁর-পাঁচশত টাকা খরচ হতো। কিন্তু এখানে এক টাকায় খেতে পেরে স্বপ্নই মনে হচ্ছে।” 

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ প্রধান সালমান খান ইয়াছিন বলেন, “আধুনিক ঘরোয়া এই রেস্টুরেন্টটিতে মনোরম এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে । এখানে রয়েছে পেশাদার বাবুর্চি, রেস্টুরেন্ট স্টাফ, মেন্যু কার্ড এবং বাহারি সব পুষ্টিকর খাবার।

“রেস্টুরেন্টটিতে ৫০ জন মানুষ বসে খেতে পারবে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ মানুষকে এই রেস্টুরেন্ট থেকে সেবা দেওয়া সম্ভব।”

অন্যদিকে বিনা পয়সা না খেয়ে টাকার বিনিময়ে খেতে পেরে সেবা নেওয়া মানুষদের আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মতৃপ্তির হাসিও এই রেস্টুরেন্টটির বড় পাওনা বলে জানান তিনি।

এক টাকার রেস্টুরেন্টের স্বেচ্ছাসেবক হৃদয় বলেন, “আজ জীবনে প্রথমবারের মতো ওয়েটারের কাজ করছি। সেটিও বিনা পয়সা। এতে করে উপলদ্ধি করতে পারবো নিয়মিত হোটেলে ওয়েটার, বাবুর্চিসহ কর্মচারীদের ঘাম ঝরানো শ্রমের মূল্য। সত্যি আমি বেশ গর্বিত প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জন্য এমন কষ্ট করতে পেরে।”

স্বেচ্ছাসেবক প্রধান আকরুম হোসেন বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরিদ্র, এতিম, অসহায়দের খুঁজে বের করে তাদের টোকেন দেয়। পরে তারা এসে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সুবিধা নেন।”

জনসংযোগ প্রধান সালমান খান ইয়াছিন বলেন, “কুড়িগ্রামে এই রেস্টুরেন্ট একটি মডেল মাত্র। দেশের বিভিন্ন দরিদ্র এলাকায় এই ধরনের কার্যক্রম চালু করা গেলে ক্ষুধায় মানুষের কষ্ট থেকে মুক্তির পাশাপাশি পুষ্টিজনিত অভাবের রোগ থেকে মুক্তি মিলবে এই জনপদের মানুষের।

তিনি বলেন, “বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চলবে। তবে এই কাজে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে প্রতিদিন এই রেস্টুরেন্ট চালানো সম্ভব।”