কলমাকান্দার ইউএনও বলেন, উব্ধাখলি নদীর পানি কিছুটা কমায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
Published : 22 Jun 2024, 11:46 AM
নেত্রকোণায় উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ছয় উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেকের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। ব্ন্যার মধ্যে কাজ না থাকায় সবচেয়ে বেশি অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা।
জেলার বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের অনেক বাড়িতে শুক্রবারও পানি দেখা গেছে। তবে মানুষজন খুব একটা বাড়ি ছাড়েননি। গবাদিপশু ও ঘরের মালামাল রেখে বাড়িছাড়া নিরাপদ মনে করেননি অনেকে। ফলে কষ্ট করে বাড়িতেই থাকছেন।
গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা হাসিদা বানুর বাড়ির উঠানেও পানি। তার বাড়ির চারপাশেই পানি দেখা গেছে। দুই ছেলে, দুই পুত্রবধূ আর দুই নাতি নিয়ে তার সংসার। এক ছেলে মাছ ধরে জীবিকা চালান। আরেক ছেলে দিনমজুরি করেন।
শুক্রবার দুপুরে হাসিদা বানু তার এক বছরের নাতি সৌরভকে কোলে নিয়ে বানের পানি ভেঙে সড়কের দিকে আসছিলেন। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি বলছিলেন, “তিন দিন ধইর্যা হানি (পানি) আইছে। বাইরোনি যায় না। গরু-বাছুরও গোয়াইলের মধ্যে আটকা। বাইর হরন যায় না। চুলাত আগুন জ্বলে না। আমরা তো গরিব মানুষ। গ্যাসও আনতারি না। টিনের চুলা দিয়া রান্দি।”
সরকারি কোনো সাহায্য পাননি জানিয়ে বলেন, “কিচ্ছুই পাইছি না। অহনো কেউ আইছে-টাইছে না।”
কোলে থাকা নাতি সৌরভকে দেখিয়ে বলেন, “আবু তো সুজি খায়, দুধ খায়। আগে তো গরু ঘাস খাইছে। অহনে তো গরুর ঘাস নাই। দুধও দেয় না। অহনে তো চাউলের লোতা একটু বাজারতে বানায়া আইন্যা খাওয়াইতাছি।”
হাসিদা বানুর মতো বন্যা কবলিত এলাকার অনেকেই তাদের দুর্দশার কথা জানিয়েছেন। কেউ বলেছেন, তারা গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। খেটে খাওয়া মানুষেরা কাজ না পাওয়ায় বিপাকে থাকার কথা বলেছেন।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে আসার কথা জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান।
শুক্রবার বিকালে তিনি জানান, উব্ধাখালি নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল হয়ে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এ ছাড়া ধনু নদের পানিও ২৪ ঘণ্টায় খালিয়াজুরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, উব্ধাখলি নদীর পানি কিছুটা কমায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তাছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়নি। রোদ উঠায় মানুষজনের দুর্ভোগ কমে আসছে।
কলমাকান্দা থানার ওসি লুৎফুর রহমান জানান, শুক্রবার দুপুরে কলমাকান্দার নাজিরপুর ইউনিয়নের রাতকান্দা গ্রামের আবু কালামের ১০ বছরের ছেলে রিফাত হোসেন বাড়ির সামনের সড়কে বানের পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে মারা যায়।
এর আগে বৃহস্পতিবার মোহনগঞ্জ উপজেলার মাঘান সিয়াধার ইউনিয়নের গৌড়াকান্দা গ্রামের মিন্টু মিয়ার আট বছরের শিশু তোরা মণি বাড়ির সামনে ঢলের পানিতে ডুবে মারা যায়।
জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ জানান, ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। ত্রাণের কোনো সমস্যা নাই।