“বাবা-মায়ের ছেলেকে বাঁচানোর অনেক স্বপ্ন ছিল। অনেক চিকিৎসা করিয়ে ছিলেন।”
Published : 09 Jan 2025, 08:00 PM
দুই বছর ধরে থ্যালাসেমিয়ায় ভুগছিলেন নবম শ্রেণি পড়ুয়া ১৪ বছর বয়সী মোহাইমিন ইসলাম ফুয়াদ। দেহে নতুন রক্ত তৈরি না হওয়ায় রুগ্নতা বাড়ছিল। কিন্তু ফুয়াদের ছিল বাঁচার আকুতি।
টাঙ্গাইল জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা করিয়ে ফল না পেয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর ছেলেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলের ফারুক হোসেন ও মহসিনা সিদ্দিকী দম্পতি।
পথে বুধবার রাত আনুমানিক ২টার দিকে ঢাকার সাভারের ফুলবাড়িয়া এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পেছন থেকে দুটি বাস ধাক্কা দিলে অ্যাম্বুলেন্সটিতে আগুন ধরে যায়। এতে দগ্ধ হয়ে পরিবারটির চারজন মারা যান।
ফুয়াদের চাচা হাবিব সিদ্দিকী বলেন, “বাবা-মায়ের ছেলেকে বাঁচানোর অনেক স্বপ্ন ছিল। অনেক চিকিৎসা করিয়ে ছিলেন। কিন্তু জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা করিয়ে তেমন ভালো ফল না পেয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন ঢাকায়।
“হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই ফুয়াদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে যাত্রীবাহী দুটি বাস পেছন থেকে ধাক্কা দিলে অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লেগে যায়। আগুনে দগ্ধ হয়ে নিভে যায় চিকিৎসা নিতে যাওয়া ফুয়াদের প্রাণ।”
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ভাবন দত্ত গ্রামের ফুয়াদকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সাভারে পরিবারের আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
তারা হলেন- ফুয়াদের বাবা ফারুক হোসেন সিদ্দিকী (৫০), মা মহসিনা সিদ্দিকী সোনিয়া (৩৫) এবং খালা মাহফুজা আক্তার সীমা (৩৮)।
ফুয়াদ স্থানীয় ভবন দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং তার বাবা মো. ফারুক হোসেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
ফুয়াদের আরেক ভাই ১০ বছর বয়সী ফাহিম বকেটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছে। একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ফুয়াদের চাচা হাবিব বলেন, “আগুনে ফুয়াদসহ তার বাবা-মা ও খালা মারা যান। এ সময় অ্যম্বুলেন্সটির চালক বের হতে পারায় প্রাণে বেঁচে যান। তাদের মরদেহ বর্তমানে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহগুলো গ্রামের বাড়িতে আনা হবে।”
সাভারের ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা শিহাব সরকার বলেন, “অ্যাম্বুলেন্সকে পেছন থেকে দুটি বাস ধাক্কা দেয়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সটির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। পরে অ্যাম্বুলেন্স ও যাত্রীবাহী দুটি বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।”
খবর পেয়ে রাত ২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
এ সময় দগ্ধ অবস্থায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানান শিহাব সরকার। ফায়ার সার্ভিস আহত সাতজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। আহত ব্যক্তিরা বাসের যাত্রী।