ভারতের চেন্নাইতে চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে, সেজন্য মেডিকেল ভিসার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান শহীদুল ইসলাম।
Published : 05 Aug 2023, 01:22 PM
নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ছররা গুলিতে আহত এক বিএনপি নেতা দৃষ্টিশক্তি হারাতে চলেছেন। অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হলেও একটি চোখে দেখছেন না তিনি, অন্য চোখে এখনি অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
গত ২৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ‘পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে’ দুই চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটুর।
এরপর রাজধানীর বেসরকারি একটি বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালে মঙ্গলবার শহীদুলের বাম চোখের অস্ত্রোপচার করেছেন ডা. নিয়াজ আব্দুর রহমান৷ বুধবার তার চোখের ব্যান্ডেজ খোলা হলেও ওই চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না শহীদুল।
ডা. নিয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার সারামুখেই গুলি লেগেছে৷ বুলেট তার বাম চোখের এদিক-ওদিক হয়ে গেছে৷ খুবই বাজেভাবে চোখটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
“চোখটিতে অপারেশন করে বুলেট বের করা হয়েছে৷ দৃষ্টিশক্তি ফিরবে কিনা জানতে অন্তত ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে৷ তবে দৃষ্টি ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ৷”
অন্যদিকে ডান চোখটিতে এখনই অপারেশন করা যাচ্ছে না জানিয়ে এই চিকিৎসক আরও বলেন, “চোখ তো খুবই সেন্সেটিভ অঙ্গ৷ তাই ওই চোখে ঠিক কোথায় গুলিটি আছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা দেখার পর অপারেশনের ব্যাপারে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ আপাতত চোখটিতে লেজার করা হয়েছে৷”
`সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন আয়োজনের’ দাবিতে ২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বিএনপি।
তার অংশ হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা করে নারায়ণগঞ্জের বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২টার দিকে শিমরাইল এলাকায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোড় দিয়ে মহাসড়কে উঠতে গেলে জেলা গোয়েন্দা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে বিএনপির সাথে সংঘর্ষ বাধে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঢিলের বিপরীতে গুলি ছোড়ে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলিতে বিএনপির অন্তত ১৫ জন নেতা আহত হন।
এই ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা এক মামলায় পুলিশ উল্লেখ করেছে, বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে তারা মোট ৭১ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়েছিলেন।
পুলিশের ছোড়া গুলি তার দুই চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে বলে জানান বিএনপি নেতা শহীদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “পুলিশের ছোড়া শটগানের ছররা গুলি আমার দুই চোখে লাগে। দুই চোখেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। গুলি লাগার পর থেকেই বাম চোখে আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না। শরীরের আরও অন্তত আটটি স্থানে গুলি লাগে। আমি ছাড়াও আমার অন্য রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন।”
ঘটনার পরে শহীদুলকে রাজধানীর ধানমণ্ডির একটি বিশেষায়িত বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান শহীদুলের স্ত্রী আফরোজা ইসলাম।
তিনি জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করাতেও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হন তারা৷ যদিও পরবর্তীতে অনেক চেষ্টা-তদবিরে বেসরকারি ওই হাসপাতালে ভর্তি হন শহীদুল৷
আফরোজা বলেন, “দুই ঘণ্টা অপারেশনের পর বাম চোখের ভেতর থেকে দু’টি বুলেট বের করা গেলেও তিনি চোখে দেখছেন না। এই চোখে দৃষ্টি ফিরে পাবেন কিনা সে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
“আর ডান চোখে এখনও বুলেট রয়ে গেছে, যেটি বেশি ভেতরে থাকায় বের করা যায়নি। এই চোখে আংশিক দৃষ্টিশক্তি থাকলেও গুলিটি বের করা না গেলে পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন বলে চিকিৎসকরা শঙ্কা করছেন। তারা বলেছেন, চোখের ভেতরে রেটিনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও ডান চোখে রক্ত জমাট বেঁধে আছে।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শহীদুলের স্ত্রী বলেন, “উনি আর চোখে দেখতে পাবেন কিনা, শিউরিটি দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। এইটা আমাদের জন্য বিশাল বড় ক্ষতি। আমি জানি না, এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে।
“এইভাবে গুলি করে কাউকে অন্ধ করে দেওয়ার সুষ্ঠু বিচার চাই। একজন বিরোধী দলের রাজনীতি করেন বলে, তাকে এইভাবে গুলি করে অন্ধ করে দেওয়া যায় কিনা, দেশবাসীর কাছে আমি সেই প্রশ্ন রাখলাম।”
দেশের বাইরে ভারতের চেন্নাইতে চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মেডিকেল ভিসার জন্য তার স্বজনরা চেষ্টা করছেন।
বিএনপির এই নেতা নাশকতার অভিযোগে পুলিশের করা এক মামলায় গত ১৬ মে জেলে যান। এক সপ্তাহ পর জামিনে মুক্তি পান তিনি৷
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ওইদিন আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। গুলি করার মতো পরিস্থিতিই সেখানে তৈরি হয়নি, পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে গুলি করেছে। পুলিশের সেই গুলিতে শহীদুল ইসলাম টিটু এখন অন্ধ হওয়ার পথে। চোখের চেয়ে মূল্যবান সম্পদ তো নাই।’
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান বিএনপির এই নেতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, “পুলিশ এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়৷ আমরা এ ব্যাপারে খোঁজ নেবো৷”
আরও পড়ুন
নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১৮, মহানগরের আহ্বায়ক আটক