গোবিন্দগঞ্জের কাটামোড় এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
Published : 24 Apr 2025, 09:25 PM
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেড নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছে সাঁওতালরা।
বৃহস্পতিবার উপজেলার কাটামোড় এলাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল অধ্যুষিত মাদারপুর, জয়পুরপাড়া ও সাহেবগঞ্জ মেরীসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে তীর-ধনুক, বাদ্যযন্ত্র, ফেস্টুন ও ব্যানার হাতে শত শত সাঁওতাল নারী-পুরুষ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন।
সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এএলআরডি যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে।
এতে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক খায়রুল চৌধুরী, লেখক-গবেষক পাভেল পার্থ, এএলআরডির পরিচালক শামসুল হুদা, এএলআরডির আইন বিষয়ক কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট রফিক সিরাজী, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, মানবাধিকারকর্মী গোলাম রব্বানী মুসা, আদিবাসী নেতা বার্নাবাস টুডু, আইনজীবী মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক, রেজাউল করিম মাস্টার, স্বপন শেখ। সভা পরিচালনা করেন আদিবাসী নেতা প্রিসিলা মুরমু ও অ্যাডভোকেট ফারুক কবীর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খায়রুল চৌধুরী বলেন, “ইপিজেড নির্মাণের নামে গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের ভেতরে সাঁওতালদের বাপ-দাদার তিন ফসলি জমি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের এক হাজার ৮৪২ একর জমি আদিবাসীদের ফিরিয়ে দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “সাঁওতালসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন ও উচ্ছেদ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে তারা দেশান্তরে বাধ্য হবেন। এতে ভাষা, সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।”
আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর উপর সহিংসতা, নির্যাতন এবং তাদের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।
আদিবাসী নেতা বার্নাবাস টুডু বলেন, শহীদ শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মারডির রক্তে ভেজা মাটিতে ইপিজেড স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সাঁওতালদেরকে উচ্ছেদ করতে গেলে পুলিশ, চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩০ সাঁওতাল আহত হন। তাদের মধ্যে সাঁওতাল মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম মারা যান।
এই ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ এবং ৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে মামলা করে। গত নয় বছরেও এই হত্যার বিচার শেষ হয়নি।
অপরদিকে এ পরিস্থিতিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এই এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তখন থেকে স্থানীয় সাঁওতালরা এখানে ইপিজেড না করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন।