ইতোমধ্যে পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
Published : 29 Sep 2024, 08:54 PM
লালমনিরহাটের তিস্তায় পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৯টায় একটু কমে ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
যদিও রোববার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৫১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে ২৯ দশমিক ৬২ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এর আগে দুপুর ১২টায় তিস্তার পানি ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ইতোমধ্যে পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
নদীর পানি বাড়ার ফলে জেলার তিস্তা তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ২৫-৩০ গ্রামে পানি ঢুকেছে।
চরাঞ্চলগুলোর ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব গ্রামের মানুষ।
জেলার পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে।
চরাঞ্চলেও পানিতে ডুবেছে বাড়িঘর ও রাস্তা-ঘাট।
তিস্তার পানি বাড়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া,হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ,কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, গোকুণ্ড ইউনিয়নের তিস্তা এলাকার নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে।
বেশকিছু গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে মাছও।
এদিকে, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে শনিবার রাতভর স্প্যার বাঁধ-২ এর উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার।
স্থানীয়রা রাত জেগে বালু ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালান।
বারঘরিয়া গ্রামের জোবায়দুল ইসলাম বলেন, “গত দুই রাতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাড়ি-ঘর ডুবে গেছে। এখন বাড়ি থেকে যে বাইরে যাব, তার কোনো উপায় নাই।”
গোবরর্দ্ধন গ্রামের আমিনুর ইসলাম বলেন, “এলাকার প্রতিটি বাড়িতে এখন হাঁটু পানি।”
শিশু ও গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপদে আছেন বলে জানান তিনি।
মহিষখোচা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ হোসত বলেন, “মহিষখোচা ইউনিয়নের ৬-৭ হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্পার বাঁধ রক্ষায় সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে বালু ভর্তি বস্তা ফেলে সেটি রক্ষার চেষ্টা করেছি রাতভর।”
এদিকে, রোববার বেলা ১১টার দিকে লালমনিরহাটের ডিসি এইচ এম রকিব হায়দারসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের পানিবন্দি লোকজনের খোঁজখবর নিতে পরিদর্শন করেছেন।
ডিসি রকিব হায়দার বলেন, “জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমরা ইউপি চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে প্লাবিত লোকজনের তালিকা চেয়েছি। সংশ্লিষ্ট ইউএনও তালিকা করছেন। যাচাই-বাচাই শেষে বন্যার্তদের সহযোগিতা করা হবে।”