নাটোর জেলা জজ আদালত অঙ্গনে বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সুপার এস এম ফজলুল হক এ ঘটনা ঘটান।
Published : 11 Mar 2025, 07:14 PM
নাটোরে যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলায় হাজিরা দিতে এসে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হলেন বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সুপার এস এম ফজলুল হক।
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে নাটোর জেলা জজ আদালত অঙ্গনে এ ঘটনা ঘটে বলে নাটোর সদর থানার ওসি মো. মাহাবুর রহমান জানান।
ফজলুল হক নাটোর সদরের জংলী এলাকার প্রয়াত সাইদুর রহমানের ছেলে। তিনি ময়মনসিংহ রেঞ্জে সংযুক্ত আছেন।
এদিন নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুন্যালের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম আসামি ফজলুল হকের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানান আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মো. আব্দুল কাদের মিয়া।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকরা ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
নাটোরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী মো. আশরাফুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, “বিচারক আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর তাকে আদালতের হাজতে না রেখে আদালত পরিদর্শকের কক্ষে বসতে দেওয়া হয়। সাংবাদিকরা তার ছবি ও ভিডিও নিতে সেখানে যান। তখন পুলিশ তাকে আদালতের হাজতে নেওয়ার জন্য বের হয়।”
সাংবাদিকরা যখন আসামি ফজলুল হকের ছবি ও ভিডিও নিচ্ছিলেন, তখন তিনি সাংবাদিকদের উপরে অতর্কিত হামলা চালান। এতে ‘এখন’ টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন জাহিদুল ইসলাম সুমন, ‘সময়’ টেলিভিশন ক্যামেরাপারসন রোকন আহমেদ, এনটিভির ক্যামেরাপারসন আর এম রবি এবং ডেইলি ভয়েস অফ এশিয়ার নাটোর প্রতিনিধি মো. কাওয়ার হাবিব সামান্য আহত হন বলে জানান আশরাফুল ইসলাম বাচ্চু।
‘এখন’ টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন জাহিদুল ইসলাম সুমন বলেন, “আসামিকে আদালত পরিদর্শকের কক্ষে থেকে হাজতখানায় নেওয়া সময়র আমরা ভিডিও ফুটেজ নিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে আসামি আক্রমণাত্বক হয়ে হামলা করে ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করেন। এ সময় আমিসহ আরও তিন সহকর্মী মোটামুটি আহত হয়েছি।”
হামলার শিকার আরেক সাংবাদিক কাওসার হাবিব বলেন, “এর আগেও নারী নির্যাতন মামলার নিউজ করায় এসপি ফজলুল হক সাংবাদিকদের হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। তিনি আজকে হঠাৎ করে আমাদের উপর হামলা করেছেন। তুই-তাকারি করে অনেক গালিগালাজও করেছেন আমাদের।”
এদিকে সংবাদ সংগ্রহের সময় সহকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাটোরের সংবাদকর্মীরা। দুপুর থেকেই তারা নাটোর আদালত চত্বরের হাজতখানার সামনে অবস্থান নেন এবং অন্যান্য আসামিদের মত ফজলুল হককেও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে কারাগারে নেওয়ার দাবি জানান।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিক নেতা ও নাটোর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, “আদালত চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীরা আসামির হাতে আহত হবে- এটা খুবই অপ্রত্যাশিত, দুঃখজনক ঘটনা। সাংবাদিকদের এভাবে আহত হওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সাবেক এসপিকেও যদি হাতকড়া পরিয়ে নেওয়া হতো তাহলে আসামি এই হামলা করার সুযোগ পেতেন না।”
এ সময় আদালত চত্বরে উত্তজনা ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা চেষ্টা করেন। এরপর সেনাসদস্যরা নাটোরের সাংবাদিক নেতাদের দাবি অনুযায়ী, আসামিকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নাটোর জেলা কারাগারে নিয়ে যায়।
নাটোরের আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. মোস্তফা কামলা বলেন, “সাংবাদিকেরা ছবি নিচ্ছিল, উনি ছবি দিতে চাচ্ছিলেন না। এটাই মূল ঘটনা। ছবি তো সাংবাদিকেরা নিতেই পারে, মন্ত্রী আসামি হইলে তো মন্ত্রীরও ছবি নেয়। ছবি নেওয়া জন্য উনি আক্রমণাত্বক হয়ে উঠেছিলেন। হামলা বলতে ধাক্কাধাক্কি করছেন।”
নাটোর সদর থানার ওসি মাহাবুর রহমান বলেন, “উনার (এস এম ফজলুল হকের) মাথায় আসলে সমস্যা হয়ে গেছে। সারাজীবন আসামি ধরেছেন, এখন নিজেই আসামি। এইটা মেনে নিতে পারছেন না। কিন্তু আইজিপি আসামি হলে তার খবরও তো ছাপা হয়। এটা সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা।”