Published : 10 Dec 2022, 04:56 PM
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের নৌ-রুটের বিভিন্ন নদীতে নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় জাহাজ শুন্য হয়ে পড়েছে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর। ফলে এ বন্দরে কর্মরত পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কার্যত বেকার হয়ে পড়েছেন।
জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমের আগেই পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও বড়াল নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি কমে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। ফলে এসব রুটে চলাচল করা সার, কয়লা, পাথর, সিমেন্ট ও জ্বালানি তেলবাহী কার্গো-জাহাজগুলো বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে যেতে পারছে না।
বাধ্য হয়ে পাটুরিয়া ও নগরবাড়ি নৌ-বন্দরের অদূরে লাইটারেজের মাধ্যমে অর্ধেক মাল আনলোড করে পাবনার বেড়া, নগরবাড়ি ও যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে মালামাল খালাস করছে এসব জাহাজ।
এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন কার্যালয়ের পরিচালক আব্দুল ওয়াহাব মিয়া বলেন, “চর নাকালিয়া, পেচাকোলা, মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, পাটুরিয়া ও নিকলি এলাকার অনেক স্থানে ডুবোচর জেগে উঠেছে। এ অবস্থায় পূর্ণলোডে পণ্যবাহী জাহাজগুলো বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে আসতে না পেরে বন্দরের অদূরে পণ্য খালাস করতে বাধ্য হচ্ছে। যে কারণে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর কার্যত অচল হয়ে গেছে।”
এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত নৌ-রুটে ড্রেজিং করতে বিআইডব্লিউটিএ-র হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরের শ্রমিক ওমর ফারুক ও জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, “অতীতে কোনদিন বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর এভাবে জাহাজ শুন্য হয়নি। প্রায় দুই মাস যাবত বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ না আসায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে নানা কষ্টে দিন জীবন যাপন করছি।”
দ্রুত নদীর নাব্য সমস্যার সমাধান করে তাদের জীবন বাঁচানোর আকুতি জানান তারা।
এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর লেবার এজেন্ট আবুল সরকার বলেন, “কোটি কোটি টাকা দিয়ে বাঘাবাড়ি ঘাট ইজারা নিয়েছি। জাহাজ না আসায় বন্দরের ৫০০- বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। আমরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ”
এদিকে বন্দরে জাহাজ না আসায় সারের সঙ্কট তৈরির আশঙ্কাও করছেন জেলার চাষীরা।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার চরচিথুলিয়া গ্রামের আব্দুল আলিম ফকির, রেশমবাড়ি গ্রামের ফিরোজ হোসেন ও পোতাজিয়া গ্রামের আজম আলীসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, ডুবোচর ও নাব্যতা সংকটের কারণে সঠিক সময়ে গুদামে সার মজুদ না হলে উত্তরাঞ্চলে রাসায়নিক সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এতে আসন্ন ইরি-বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে সারের কোনো সঙ্কট হবে না জানিয়ে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরের বাফার গুদামের ইনচার্জ হারুন আর রশিদ বলেন, “বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে জাহাজ না এলেও বাঘাবাড়িসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামে ইরি-বোরো আবাদের জন্য আপদকালীন সার মজুদের কাজ পুরোপুরি চলছে। ট্রাকযোগে সার পরিবহন করা হচ্ছে।”
বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, “এটা দ্বিতীয় শ্রেণির নৌ-বন্দর। নিয়ম অনুযায়ী এ বন্দরের চ্যানেলে সাত থেকে আট ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলার কথা। নিয়ম অমান্য করে সেখানে ১০-১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ আসলে তো সমস্যা হবেই।”
তিনি জানান, বন্দরটি প্রথম শ্রেণির বন্দরে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। এটি হয়ে গেলে এসব সমস্যা আর থাকবে না।