আন্দোলনে নিহত শ্রমিক জালালের পরিবারের দায়িত্ব নিল মাল্টিফ্যাবস

বাবার ইচ্ছাপূরণ করতে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হতে চায় জালালের মেয়ে মরিয়ম।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2023, 12:46 PM
Updated : 21 Nov 2023, 12:46 PM

গাজীপুর মহানগরীতে বেতন ‍বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত পোশাক শ্রমিক জালাল উদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছে মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড।

মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর কাশিমপুর নয়াপাড়ায় মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কারখানায় যান জালালের স্ত্রী নার্গিস পারভীন ও তার নয় বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়ম।

এ সময় কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেজবা ফারুকী তাদের চিকিৎসা বাবদ দেড় লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন।

এ ছাড়া তিনি জালালের মেয়ের লেখাপড়া ও বিয়ে পর্যন্ত সব দায়দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান।

তৈরি পোশাক শ্রমিক জালাল উদ্দিন (৪০) জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের সুইং সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে।

Also Read: গাজীপুরে সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে আহত শ্রমিকের মৃত্যু

৮ নভেম্বর বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনকালে কারখানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন জালাল। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।

জালালের স্ত্রী নার্গিস পারভীন মেয়েকে নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। এর মধ্যেই মাল্টিফ্যাবস কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে খুঁজে বের করে। খবর পেয়ে নার্গিস পারভীন আজ সেই কারখানায় যান।

এ সময় জালালের স্ত্রী কাজ করার ইচ্ছাপোষণ করলে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকে চাকরির দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

কারখানার এমডি মেজবা ফারুকী বলেন, “শিশু মরিয়মের ছবিটা পত্রিকায় যেদিন ছাপা হয়েছিল সেদিনই আমার চোখে পড়ে। আমি খুব কষ্ট পাই। ছবিটা দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে খুবই কান্না পায়।

“তখনই সিদ্ধান্ত নেই মেয়েটির জন্য কিছু একটা করার। নিজের সেই দায়বদ্ধতা থেকেই প্রাথমিকভাবে তাদের জন্য দেড় লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।”

এ ছাড়া জান্নাতুল যতদিন লেখাপড়া করবে যতদূর করবে বিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সব খরচ বহন করার কথা জানান তিনি।

জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়ম মহানগরীর জরুন এলাকার গাজীপুর সিটি আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই কাঁদতে শুরু করে সে।

মরিয়ম বলে, “বাবা কাজে যাওয়ার সময় আমাকে বলত, তোমাকে ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে। বড় হয়ে তোমাকে ডাক্তার হতে হবে। তাই আমি ডাক্তার হতে চাই।”

জালালের স্ত্রী নার্গিস পারভীন বলেন, “আমার স্বামী মারা গেছে, আমি এখন অসহায়। আমি বিএ পাশ করেছি। মাল্টিফ্যাবস কারখানা আমাকে চাকরি দিতে চেয়েছে, এজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

“আমার মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছে তারা। তাদের এই ঋণ পরিশোধ করতে পারব না। মেয়েকে নিয়ে আমি এখন জীবন সংগ্রামে নেমেছি।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওই কারখানার এজিএম (এইচআর অ্যাডমিন) মো. আবু সেহাব, ব্যবস্থাপক রিপুল মিয়া, সহকারী ব্যবস্থাপক খ. আহমাদুল কবির মান্না, এক্সিকিউটিভ মো. ওমর হামদু, শ্রমিক প্রতিনিধি সায়লা আক্তার ও আরিফা আক্তার, নাজমুল হুদা, মনির হোসেন, সোহাগ হোসেন।