৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন আবুল কালাম আজাদ

১৯৭৬ সালে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন, কিন্তু তখন পরীক্ষা দিতে পারেননি।

শেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2022, 03:27 PM
Updated : 29 Nov 2022, 03:27 PM

বৃদ্ধ বয়সে এসে এসএসসি পাস করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার আবুল কালাম আজাদ।

৬৭ বছর বয়সী কালাম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুল থেকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।

সোমবার দুপুরে পরীক্ষার ফলাফল তিনি হাতে পান। তিনি জিপিএ ২.৯৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আবুল কালাম আজাদ শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজীরচর ইউনিয়নের লঙ্গরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এলাকায় তিনি ‘কবি কালাম’ নামে পরিচিত। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৯৭৬ সালে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ওই বছর তাদের বাড়িতে আগুন লেগে বই-খাতাসহ পরিবারের সবকিছু পুড়ে যায়। আর্থিক সংকটে পড়ে তার পরিবার। পড়াশোনা ছেড়ে কাজ শুরু করতে হয় তাকে।

তখন তিনি ঢাকায় চলে আসেন। চাকরি নেন একটি ডকইয়ার্ডে। ঢাকায় থাকেন ২২ বছর। ঢাকায় থাকাকালে বিয়ে করেন। ১৯৯৫ সালে চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে ১৮ বছর প্রবাস জীবন কাটান। ২০১৩ সালে শ্রীবরদীর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেও এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। সেই দুঃখ তিনি ভুলতে পারেননি। ২০২০ সালে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হন। ২০২১ সালে প্রথম সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হন। এরপর গত সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। সোমবার ফলাফল প্রকাশিত হয়।

পরীক্ষায় পাসের প্রতিক্রিয়ায় আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ছোট ছেলে আরিফুলের কাছ থেকে পাশের খবর প্রথম জানতে পারি। খুব ভালো লাগছে। আমার চাইতে আমার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাসহ এলাকাবাসী খুবই খুশি হয়েছে।

“বৃদ্ধ বয়সে পড়ালেখা করাটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। সেই চ্যালেঞ্জে প্রাথমিকভাবে জয়ী হয়েছি। এখন আরও অনেক দূর যেতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই।”

পড়াশোনার পাশাপাশি নিজে লেখালেখিও করেন জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, “সবসময় সংবাদপত্র ও বই পড়ি। গান লিখি, কবিতা লিখি। কয়েকটি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখেছি। এসবের পাণ্ডুলিপি যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করেছি। শিক্ষা আর জ্ঞানার্জনের জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি। সুশিক্ষা মানুষের জীবন ও মনকে উন্নত করে। কুসংস্কার থেকে মুক্ত রাখে।”

খড়িয়া কাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া বলেন, আবুল কালাম আজাদের এসএসসি পরীক্ষায় পাশের খবর শুনে তিনি ও এলাকার লোকজন খুবই খুশি হয়েছেন। তিনি বৃদ্ধ বয়সে ধৈর্য ধরে পড়ালেখা করে এসএসসি পাস করেছেন। তার এই কৃতিত্বের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।