কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিক সাংবাদিকদের বলেন, “উপাচার্য তার কার্যালয়েই রয়েছেন।”
Published : 13 Mar 2023, 03:30 PM
অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিদেশ সফর শেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক কাজী আজিজুল মাওলা।
সোমবার সকাল ৯টায় অধ্যাপক আজিজুল বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় এসে নিজের কার্যালয় তালাবদ্ধ দেখতে পান। তখন কর্মচারীদের কক্ষ খুলে দিতে বললে তারা ট্রাস্টি বোর্ডের নিষেধ রয়েছে বলে জানান। এরপর তিনি কার্যালয়ের বাইরে লবিতে অবস্থান নেন।
উপাচার্য বলেন, “আমি রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে রাষ্ট্রপতির কাছে করতে পারেন। এভাবে আমাকে কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া ঠিক নয়।“
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর রোষানলে পড়েছেন অভিযোগ করে উপাচার্য বলেন, বাহিরাগত কিছু লোকও কার্যালয়ে প্রবেশে তাকে বাধা দিয়েছে। বিকালে নগরীর জিন্দাবাজারের ইমজা’র কনফারেন্স হলে তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন।
তবে কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিক সাংবাদিকদের কলেন, “উপাচার্য তার কার্যালয়েই রয়েছেন।”
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “উপাচার্য বিদেশে গিয়ে মানি লন্ডারিং করেছেন।”
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক কাজী আজিজুল মাওলাকে লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য নিয়োগ দেন। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ১ মার্চ তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
চলতি বছরের ১২ থেকে ২৪ জানুয়ারি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে উপাচার্য অধ্যাপক আজিজুল মাওলা ইউজিসির অনুমতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। তবে অসুস্থতা ও ফ্লাইট জটিলতার কারণে সময়মতো দেশে ফিরতে পারেননি।
১৬ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরার তিন দিন পর বিধি অনুযায়ী উপাচার্য হিসেবে লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ফিরতে চাইলে কোষাধ্যক্ষসহ কর্তৃপক্ষ বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেন উপাচার্য।
১৬ ফেব্রুয়ারি কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করে লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলীকে চিঠি দেন উপাচার্য অধ্যাপক আজিজুল।
এতে তিনি বলেন, “২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনটি চেকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ড থেকে ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক কোনো ধরনের কার্যাদেশ ছাড়াই স্কিলটেক ইনিটেটিভস অ্যান্ড ভেঞ্চারস বিডি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টাকা প্রদান করেন।
একে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ২০১০-এর ৩৩২ ধারা, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮-এর পরিষ্কার লঙ্ঘন উল্লেখ করে ওই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন অধ্যাপক আজিজুল।
ওই চিঠির অনুলিপি ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হয়।
এরপর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনা বেতনে ছয় মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক কাজী আজিজুল মাওলার কাছে একটি চিঠি পাঠান।
ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের উপাচার্যকে ছুটিতে পাঠানোর এক্তিয়ার নেই; সেটি একমাত্র রাষ্ট্রপতি করতে পারেন এমনটা দাবি করে গত ৫ মার্চ উপাচার্যের পক্ষে কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া একটি আইনি নোটিশ পাঠান।
লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলী ও কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিককে পাঠানো নোটিশের অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব এবং আচার্য ও রাষ্ট্রপতির সচিবকে পাঠানো হয়।
নোটিসে, উপাচার্যকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়াকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর পরিপন্থি ও মানহানিকর উল্লেখ করে চিঠি প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার উপাচার্য অধ্যাপক আজিজুল মাওলার অনুপস্থিতিতে লিডিং ইউনিভার্সিটির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিকের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলী।
এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলী কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক আজিজুল যে গাড়িটি ব্যবহার করতেন সেটি জব্দ করা হয়েছে। এমনকি উপাচার্যের অফিসিয়াল ই-মেইল আইডির পাসওয়ার্ড পাল্টে দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপ থেকে তাকে ‘অপসারণ’ করা হয়েছে।