যশোরে ইলিশের ‘আকাল’: পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছে ঢাকায়

ভরা মৌসুমেও ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন না যশোরবাসী।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2022, 07:54 AM
Updated : 9 August 2022, 07:54 AM

শ্রাবণ মাস শেষ হতে চললেও যশোরের বাজারে ‘কাঙ্ক্ষিত’ ইলিশের দেখা মিলছে না; ‘যৎসামান্য’ যা আসছে তার দামও আকাশচুম্বি বলে স্থানীয় আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর অল্প সময়ে পৌঁছানোর সুবিধা ও ‘ভালো দাম’ পেয়ে বরগুনা ও ভোলা জেলার ইলিশ ব্যবসায়ীরা ঢাকায় ছুটছেন। ফলে বরিশাল বিভাগ থেকে যশোরে ইলিশ মাছ সরবরাহ ‘আশঙ্কাজনক হারে’ কমে গেছে।

যশোরের আড়তদাররা ভরা মৌসুমে ইলিশ বিক্রির আশায় টাকা অগ্রিম বা দাদন দিয়েও মাছ না পেয়ে নিরাশ হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যশোর অঞ্চলের লোকজন।

মঙ্গলবার সকালে যশোর শহরের মাছ বাজারের খুচরা বিক্রেতা এরশাদ আলীকে এক কেজির একটু বেশি ওজনের ইলিশ কেজি প্রতি ১৫শ’ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেলো।

এছাড়া ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি করেছেন ১১শ’ টাকায়। আর ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি করেছেন ৮শ’টাকায়। আর ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি করেছেন সাড়ে ৪শ’ টাকায়।

বাজারে ইশিলের দাম বেশি কেন জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, ইলিশ মাছের আমদানি ‘অনেক কম’।

যশোর বড়বাজার মাছ বাজারের আড়তদার ‘মেসার্স তিতাস ফিশের’ স্বত্বাধিকারী গোলাম তাহের টগর বলেন, “ইলিশের ভরা সিজন চলছে, কিন্তু যশোরে ইলিশের সরবরাহ কম। ভোলা ও পাথরঘাটার ব্যবসায়ীরা পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় ইলিশ নিয়ে বিক্রি করছে।”

যশোরে বর্তমানে যে দরে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে তার থেকে গত বছর এই সময়ে ৩০০/৪০০ টাকা কম ছিল বলে জানান তিনি।

এই আড়তদার বলেন, “যশোরের অধিকাংশ আড়তদার ভোলা জেলার দৌলতখান ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটার ইলিশ মাছের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম টাকা দিয়েছেন ইলিশ মাছের জন্য। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না আসায় তারা লোকসানে পড়েছেন ।”

ভোলার দৌলতখান উপজেলার চৌকিঘাট এলাকার মাছের আড়তদার আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয় মোবাইল ফোনে। তিনি বলেন, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা হয়ে অত্যন্ত কম সময়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে তারা ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ইলিশ মাছ নিয়ে হাজির হতে পারছেন। সেখানে মাছ বিক্রি করে দামও আগের তুলনায় ভালো পাচ্ছেন।

“বর্তমানে সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু নদীতে ইলিশ কম। সম্প্রতি সিলেটে বন্যা হওয়ায় পলি পড়ে নদীর নাব্য কমে গেছে। পানির গভীরতা কমে যাওায় সাগর থেকে নদীতে ইলিশ আসছে না।” বলেন আব্দুল।

বরগুনার পাথরঘাটা পাইকারি মৎস্য বাজারের ‘মেসার্স বি পি মৎস্য আড়তের’ স্বত্বাধিকারী বাবুরাম কর্মকার বলেন, “আগে ফেরির নানান ত্রুটির জন্যে যশোর ও খুলনায় ইলিশ পাঠাতে দেরি হয়ে যেত। মাছ সংরক্ষণের জন্য বরফও লাগতো বেশি। ছিল মাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও। সময়মত মাছ মোকামে পাঠতে না পারলে বিক্রি ও দাম কোনটাই ভালো হতো না।

“এখন পদ্মা সেতু হওয়ায় সেসব অসুবিধা কেটে গেছে। আমাদের প্রচণ্ড সুবিধা হয়েছে। মাছ লোড দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে ভোরেই ঢাকার আব্দুল্লাহপুর, যাত্রাবাড়ি, বাইবেল, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে পৌঁছে যাচ্ছে। সেখানে পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে; দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।”

ওইসব মার্কেট থেকে খুচরা বিক্রেতারা ইলিশ মাছ কিনে ঢাকার অন্যান্য এলাকার বাজারগুলাতে বিক্রি করে বলে জানান এ আড়তদার।

তাছাড়া ঢাকায় সবখানে ৪০ কেজিতে ইলিশের মণ বিক্রি হয়। যেখানে যশোরে ৪২ কেজি, খুলনার রূপসা ঘাটে ৪৪ কেজি ও খুলনার ৫ নম্বর ঘাটে ৪২ কেজি মণ দরে ইলিশ বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

যশোর জেলা মৎস্য অফিসার মো. ফিরোজ আহমেদ বলেন, “ব্যবসায়ীরা যেখানে দাম ভালো পাবেন সেখানেই তাদের প্রোডাক্ট নিয়ে যাবেন। গত বছর এই সময়ে যশোর বড়বাজার মাছ বাজারে ইলিশ মাছের দাম ৩০০/৪০০ টাকা কম ছিল। আমদানি কম হওয়ার কারণে ইলিশের দামটা একটু বেশি যাচ্ছে।”