শিল্পী সুলতানের ৯৮তম জন্মদিন

সমাধিতে ফুল দেওয়ার পাশাপাশি কোরান খতম, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

নড়াইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2022, 08:18 AM
Updated : 10 August 2022, 08:18 AM

নড়াইলে নানা আয়োজনে বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৮তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে।

বুধবার এস এম সুলতান কমপ্লেক্সে কোরান খতম, চিত্রাঙ্কন, রচনা প্রতিযোগিতা ও শিল্পীর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন।

জেলা প্রশাসন, পুলিশ, এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, নড়াইল প্রেস ক্লাব, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, এস এম সুলতান বেঙ্গল চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়, লাল বাউল সম্প্রদায়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রথিতযশা এই শিল্পীর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

শিল্পী সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ অগাস্ট নড়াইল পৌরসভার মাছিমদিয়া গ্রামে মেছের আলী ও মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি শিশুদের ছবি আঁকা শেখাতেন। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তার মৃত্যুর পর গড়ে তোলা হয় শিশুস্বর্গ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার বাড়িতে হয়েছে এস এম সুলতান কমপ্লেক্স। সেখানে শিল্পীর মাজার ও স্মৃতি সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুলতান কমপ্লেক্সে প্রিয় শিল্পীর স্মৃতি ও কর্মসম্ভার দেখতে আসেন ভক্তরা।

শিশু চারুকারু ফাউন্ডেশনের পরিচালক শেখ আব্দুল হানিফ বলেন, “সুলতান কেবল নড়াইলের নন, তিনি মানব জাতির সম্পদ। তার আঁকা ছবির নারী-পুরুষ পেশিবহুল সুঠাম দেহের অধিকারী। তিনি এভাবে দেশের কৃষাণ-কৃষাণী, কামার-কুমারদের কল্পনা করতেন। প্রচুর ছবি একেঁছেন সুলতান।

“তার আঁকা কিছু ছবি বর্তমানে সুলতান সংগ্রহশালায় থাকলেও অনেক ছবির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ছবিগুলো জাতীয় সম্পদ এবং সেগুলোর বিষয়ে খোঁজ নেওয়া উচিত।”

শিশুস্বর্গের শিক্ষার্থীরা অনেকে শিল্পী সুলতাকে দাদু বলে থাকে।

১২ বছরের কামরুল বলে, “আমি এখানে ছবি আঁকা শিখতে আসি। আমার সাথে আমার বন্ধুরাও এখানে ছবি আঁকতে আসে। এখানে এসে সুলতান দাদুর বাড়িতে ঘুরতে আমাদের খুব ভাল লাগে।”

কোভিড মহামারীর সময় দর্শনার্থীদের ভিড় না থাকলেও বর্তমানে সুলতান কমপ্লেক্সে অসংখ্য মানুষ তার কর্মযজ্ঞ দেখতে আসেন বলে জানান সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দোতালা সংগ্রহশালায় প্রদর্শনীর জন্য মোট ৭৪টি ছবি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি মূল ছবি আর ৫১টি রেপ্লিকা।”

সংগ্রহশালা ঘিরে পর্যটনবান্ধব পরিবেশ তৈরিসহ বিভিন্ন উন্নয়চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন নড়াইলের ডিসি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।

ডিসি বলেন, “সুলতানের স্মৃতি সংগ্রহশালাটি আধুনিক নয়। ভবনটি জরাগ্রস্ত। বিশ্বনন্দিত শিল্পীর সংগ্রহশালাটি বিশ্বমানের করার চেষ্টা করতে হবে। সুলতান কমপ্লেক্সকে আধুনিক করার জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে।”

বর্তমান সংগ্রহশালার পাশে চিত্রা নদীতে ঘাট নির্মাণসহ এলাকাটি পর্যটনবান্ধব করতে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কারে ভূষিত হন।

ডিসি হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, অতিরিক্ত ডিসি (সার্বিক) মো. ফকরুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রিয়াজুল ইসলাম, পৌরমেয়র আঞ্জুমান আরা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মলয় কুমার কুণ্ডু, নড়াইল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল ইসলাম টুলু জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন।