উব্ধাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার খবর জানিয়েছে পাউবো।
Published : 02 Jul 2024, 04:25 PM
নেত্রকোণায় টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে নতুন করে আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার প্রধান নদী উব্ধাখালির পানি বেড়ে বিপৎসীমা ওপর দিয়ে বইছে। বেড়েছে সোমেশ্বরী, কংশ ও ধনু নদীর পানিও।
জেলার সবকটি নদীর পানি বাড়ায় কলমাকান্দা উপজেলার নিচু এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এসব এলাকার গ্রামীণ সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে। সংকট দেখা দিয়ে গোখাদ্যের।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে উব্ধাখালি নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান।
তিনি বলেন, পানি বাড়ছে সোমেশ্বরী ও কংশ নদীতেও। দুপুরে সোমেশ্বরীর পানি বেড়ে দুর্গাপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। এ ছাড়া কংশ নদীর পানি বেড়ে জারিয়া পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার এবং ধনু নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, উব্ধাখালি নদীর পানি বেড়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সদর, বড়খাপন, পোগলা ও কৈলাটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল বেশি তলিয়েছে। কিছু বাড়িতে পানি ঢুকেছে।
এ ছাড়া নাজিরপুর, লেঙ্গুরা ইউনিয়নের কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে পানিবন্দি মানুষের খবর উপজেলা প্রশাসনের কাছে নেই।
স্থানীয়রা জানান, কলমাকান্দার অর্ধশতাধিক গ্রামে পানি ঢুকেছে। সপ্তাহখানেক আগেও এ উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছিল। তখনও সেখানকার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
সপ্তাহ ঘুরে নতুন করে আরও বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সদর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হারাধন সরকার।
তিনি বলেন, “গ্রামের অন্তত ৩০০ পরিবারের বাড়ির আঙিনায় পানি ঢুকেছে। রোববার থেকে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। যত সময় যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি ততই ভয়াবহ হয়ে উঠছে।”
বড়খাপন ইউনিয়নের বাউসারি গ্রামের জামাল মিয়া বলেন, “গ্রাম থেকে মূল সড়কে যাওয়ার সংযোগ সড়কে পানি। আশপাশের গ্রামগুলোতেও পানি ঢুকছে। বাড়ির চারপাশেই পানি আর পানি। হু হু কইর্যা পানি বাড়তাছে। গরু-বাছুর লইয়া বিপদে পড়ছি।”
বরুইউন্দ গ্রামের আল আমিন মিয়া বলেন, “চোখের সামনে দেখতে দেখতে পানি বাইর্যা গেছে। কয়েকদিন আগেই একটা বন্যা কাটায়া উঠলাম। অহনও হেই বন্যার জেরই কাটায়া উঠি নাই। নতুন বিপদ সামনে আইছে।”
উপজেলার আমবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা জমির উদ্দিন বলেন, “গ্রামের চাইদিক দিয়াই পানি। নদী থেকে হুর হুর কইর্যা পানি আইতাছে। পানি বাইড়্যাই চলতাছে। আরও বৃষ্টি অইব মনে হইতাছে। কী যে করাম।”
বন্য মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ইউএনও আসাদুজ্জামান বলেন, “স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসার মতো অবস্থা হয়নি। তবে আশ্রয়কেন্দ্র ও পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা আছে।”
আরও পড়ুন:
নেত্রকোণায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে, দুর্গত এলাকায় মেডিকেল টিম
নেত্রকোণায় পুকুর-নদীতে ডুবে শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু
নেত্রকোণায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে, দুর্গত এলাকায় মেডিকেল টিম
'তিন দিন ধইর্যা নাতিডারে দুধ খাওয়াইতাম পারতাছি না, লোতা দিতাছি'