‘ধানাই-পানাই চলবে না। মজুরি বাড়াতে হবে। না হলে আন্দোলন চলবে।’
Published : 24 Aug 2022, 03:45 PM
দুই-একটা বাদে মৌলভীবাজারের সব চা-বাগানে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে।
শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইমলাম বলেন, জেলার ৯২টি চা-বাগানের মধ্যে বুধবার শুধু শ্রীমঙ্গলের জেরিন চা-বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার প্রশাসনের তৎপরতায় জেলার ১২টি বাগানের শ্রমিকরা কাজে ফিরলেও বুধবার আবার তারা কর্মবিরতিতে যান। এতে নানামুখী চাপে পড়ে এই শিল্প। আবার শ্রমিকরাও এই আন্দোলন থেকে দাবি আদায় না করে আর কাজ করতে চান না।
শ্রীমঙ্গলের আমরইল ছড়া চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রঙ্গন শীল বলেন, “চা শ্রমিকদের দুর্বলতা রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। তাই মালিকরা প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে আমাদের ঠকাতে চান। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সবই বুঝি। ধানাই-পানাই চলবে না। মজুরি বাড়াতে হবে। না হলে আন্দোলন চলবে।”
সম্প্রতি শ্রমিকদের বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বিদেশ যাবেন। দেশে ফিরে তিনি চা-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কিন্তু এই ভাষণের সত্যতা নিয়ে সন্দিহান চা শ্রমিকরা। এটা মালিকপক্ষের চালাকি বলে শ্রমিকদের ধারণা।
এদিকে কাজ বন্ধ থাকায় দুটি পাতা একটি কুঁড়ির জায়গায় পাঁচ-সাতটি হয়ে গেছে, যা এখন কাঁচি দিয়ে কাটতে হবে। কাঁচি দিয়ে কাটলে নতুন পাতা আসতে সময় লাগবে মাস খানেক।
শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও চা-বাগানের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত তাদের বাগানে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কারখানায় পচেছে উত্তোলিত চা, সেকশনে নষ্ট হয়েছে কুঁড়ি।
“শুধু চলমান ক্ষতি নয়, এতে চা-শিল্প দীর্ঘ মেয়াদে চাপে পড়বে। বছরের এ সময়টায় আমাদের বাগানে প্রতিদিন নতুন চারার জন্য ডাল কাটা হয় প্রায় ১০ হাজার পিস, যা মাটির বেডে রোপণ করা হয়। একই সঙ্গে আগে রোপণ করা চারা তুলে পলি ব্যাগে রাখতে হয়, যা এখনও হয়নি। অথচ সময় চলে যাচ্ছে। এতে আগামী মৌসুমে চারার অভাব দেখা দেবে। নানামুখী চাপে পড়ছে চা-শিল্প।”
শ্রম কর্মকর্তা নাহিদুল ইমলাম শ্রমিকদের আন্দোলনের পেছনে অন্য কোনো পক্ষের রাজনীতি আছে বলে মনে করেন।
নাহিদুল বলেন, “এটি শুধু আন্দোলন নয়। এটি শিল্প ধ্বংসের একটি পাঁয়তারা। শ্রমিকনেতারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ শুনেছেন। কিন্তু একটি পক্ষ সহজ-সরল শ্রমিকদের ইমোশন কাজে লাগিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে রাজনীতি ঢুকেছে। আছে ভোটের রাজনীতিও।”
তবে কে বা কারা এই রাজনীতির পেছনে সক্রিয় রয়েছেন তা তিনি খোলাসা করেননি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে নাহিদুল বলেন, “আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে নির্দেশনা এসেছে, প্রধানমন্ত্রী সামনে বিদেশ যাবেন। দেশে ফিরে তিনি গণভবনে চা-শ্রমিকদের কথা শুনে ব্যবস্থা নেবেন।”