গাজীপুরের ভোটে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডেও বিএনপি নেতাকর্মী

মেয়র পদে ৯ জন আর কাউন্সিলর হিসেবে লড়ছেন ২৭৩ জন।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2023, 07:39 PM
Updated : 6 May 2023, 07:39 PM

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি, তবে গাজীপুর সিটির ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়তে দেখা যাচ্ছে দলটির নেতাকর্মীকে। 

এ ছাড়া আগামী ২৫ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন এক বিএনপি নেতার ছেলে। 

নির্বাচনে মেয়র পদে ১২ জনের পাশাপাশি ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৩০০ জন। যাচাই-বাছাই শেষে মেয়র পদে আছেন নয়জন আর কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে টিকে আছেন ২৭৩ জন। 

ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হতে যাওয়া এই নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার এখনও শুরু না হলেও থেমে নেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অন্যদের পাশাপাশি অন্তত ২৪ বিএনপির নেতা, কর্মী ও সমর্থক প্রত্যক্ষভাবে প্রচার বা জনসংযোগ চালাচ্ছেন। যাদের ২৩ জনই দলটির মহানগর, ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পদধারী নেতা। 

এদের মধ্যে আটজন ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লায় বিএনপিপন্থি প্রার্থীরা পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রার্থিতা ঘোষণা করে ভোটারদের কাছে দোয়া চাইছেন। অনেক প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকেও সরব প্রচার চালাচ্ছেন। 

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শওকত হোসেন সরকার বলেন, “আমার জানা মতে বা যতটুকু চিনি এমন ২৩ থেকে ২৪ জন কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছে। আর মেয়র পদে যিনি নির্বাচন করছেন তার দলীয় কোনো পদ-পদবী নেই। তবে তার বাবা (বর্তমানে জেলে আছেন) ও চাচা বিএনপির নেতা।” 

তিনি আরও বলেন, “আমাদের স্থায়ী কমিটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে না, কাউকে সমর্থনও করা যাবে না। এক কথায় এই ভোট বর্জন করতে হবে।”        

গাজীপুর মহানগর বাসন থানা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, “গাজীপুর সিটি নির্বাচনের বিষয়ে দল থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কেউ নির্বাচন করলে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। কাউন্সিলর পদে কেউ নির্বাচন করলেও আমরা তার সঙ্গে নেই।” 

নির্বাচনে বিএনপির নেতাদের অংশগ্রহণ নিয়ে মহানগর বিএনপির ১২ জন নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। 

তারা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে (জয়ারটেক-নসের মার্কেট) কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন আলম, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে (ভোগড়া) শ্রমিক দল নেতা ফয়সাল আহমাদ সরকার, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের (দিঘিরচালা-বারবৈকা) বর্তমান কাউন্সিলর বাসন থানা বিএনপির সদস্যসচিব মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী ওরফে মুসা প্রার্থী হয়েছেন। 

এ ছাড়া বাসন থানার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে (চান্দনা-যোগীতলা) ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে (কাউলতিয়া-সালনা) বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি নেতা তানভীর আহমেদ, সদর মেট্রো থানার ২২ নম্বর ওয়ার্ডে (বাংলাবাজার-বাহাদুরপুর) বিএনপি নেতা ছবদের হাসান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে (পোড়াবাড়ি-ভাওরাইদ) বিএনপি সমর্থক খোরশেদ আলম প্রার্থী হয়েছেন। 

বিএনপি নেতা সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রশিদ খান ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে (শিমুলতলী-চতর), ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে (ভুরুলিয়া) বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি সমর্থক মজিবুর রহমান, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের (বিলাসপুর-মারিয়ালী) বর্তমান কাউন্সিলর ও সদর মেট্রো থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হান্নান মিয়া, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে (জয়দেবপুর শহর) বর্তমান কাউন্সিলর সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক হাসান আজমল ভুঁইয়া এবারও প্রার্থী হয়েছেন। 

কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের (ছোট দেওড়া) বিএনপি নেতা খায়রুল আলম ও সাবেক ছাত্রদল নেতা জিএস মনির হোসেন, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে (কানাইয়া-নীলেরপাড়া) বিএনপি সমর্থক শামসুল আলম অরুণ। 

এ ছাড়া গাছা থানা এলাকায় ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে (শরীফপুর) বিএনপি সমর্থক সাবেক কাউন্সিলর মো. মাহফুজুর রহমান ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে (বাদে কলমেশ্বর) গাছা থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন, পুবাইল থানা এলাকার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের (মেঘডুবি) পুবাইল থানা বিএনপির সদস্যসচিব মো. নজরুল ইসলাম, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে (তালটিয়া) বিএনপির নেতা সুলতান উদ্দিন আহমেদ কাউন্সিলর পদে লড়বেন

৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের (টঙ্গীর দত্তপাড়া) বর্তমান কাউন্সিলর টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিউদ্দিন আহমেদ, ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মিলন হোসেন মেট্রো থানা বিএনপির সদস্য, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের (মিলগেইট) কাউন্সিলর শ্রমিক দল নেতা আবুল হোসেন ও সেলিম মিয়া সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। 

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডটি গাজীপুরের শহরের কাছে। সেই ওয়ার্ডে গত দুইবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর হলেন সদর মেট্রো থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক হান্নান মিয়া। তিনি এবারও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ঈদের আগে থেকেই এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসছেন। এখনও তিনি প্রচার চালাচ্ছেন। 

নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে মো. হান্নান মিয়া বলেন, “কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের ব্যাপারে দলীয় কোনো নির্দেশনা এখন পযন্ত পাইনি। কাউন্সিলররা যেহেতু দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না তাই কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। 

“তাছাড়া দুই মেয়াদে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি। তাদেরও প্রত্যাশা আছে।” 

অপরদিকে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাইপো ও সাবেক বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহ নুর ইসলাম রনি। 

শুক্রবার তিনি টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকায় একটি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। সেখানে নামাজ শেষে স্থানীয়দের কাছে দোয়া চেয়েছেন। 

শাহ নুর ইসলাম বলেন, “আমি যখন নির্বাচন করবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে চায়।” 

তিনি বলেন, “জনগণের কাছে বর্তমান সরকারের আস্থা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। জাহাঙ্গীর আলম এবং আজমত উল্লা খান দুজনই নৌকার মানুষ। 

“সেই ক্ষেত্রে আমি চিন্তা করলাম যেহেতু জাতীয়তাবাদীর শক্তির একটি বড় অবস্থান গাজীপুরে আছে। সে ক্ষেত্রে আমার একটা সম্ভাবনা রয়েছে এই নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার জন্য। 

“সেইসব দিক চিন্তা করে আমার নির্বাচনে আসা। আমার নির্বাচন করতে কোনো বাধা নিষেধ আসেনি”, বলেন এই মেয়র প্রার্থী।