এ ঘটনার উভয় পক্ষের ১০-১২ জন আহত হওয়ার দাবি করা হচ্ছে।
Published : 02 Jul 2024, 10:23 PM
সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা মারামারিতে জড়িয়েছেন। পরিবেশ শান্ত রাখতে আন্দোলনে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
মঙ্গলবার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচ তলায় এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
তারা আরও জানান, সকাল থেকে একাডেমিক ভবনের নিচ তলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ কর্মবিরতি শুরু করে।
পরে ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার নিয়ে কিছু কর্মকর্তা সেখানে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করতে যান।
তখন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা তাদের বাধা দেন এবং ব্যানার ছিনিয়ে নেন।
পরে ব্যানার ছাড়াই তারা অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসূচির স্থলের পাশে এসে অবস্থান নেন।
কিছুক্ষণ পর ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার আনা হয়।
তখন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা আবারও তাতে বাধা দেন।
এ নিয়ে বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে লিপ্ত হন দুপক্ষের কর্মকর্তারা।
এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ চেয়ার ছোড়াছুড়ি শুরু করে। তখন পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মারামারিতে আহত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. তানজিম হাসান, সহকারী রেজিস্ট্রার তৌসিক আহমেদ রাহাত, সেকশন অফিসার মাহমুদুল হাসান, মিজানুর রহমান, আবু সায়েম এবং ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও পরিকল্পনা দপ্তরের ডিপুটি ডিরেক্টর আবু হাসান, প্রকৌশল দপ্তরের উপপ্রধান প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদীন, অর্থ দপ্তরের ডেপুটি একাউন্টস অফিসার ইকবাল মিয়া ও সহকারী রেজিস্টার আনোয়ার সাদাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহত মুরশীদ আবেদীন বলেন, “চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ধর্মঘটে ছিলাম।
এ সময় বাহাউদ্দিন গোলাপ, নজরুল, জুয়েল মাহমুদের নেতৃত্বে কতিপয় কর্মকর্তা আমাদের ওপরে হামলা চালিয়েছে। চেয়ার, রড, লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। এতে আমাদের ৫-৬ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। যারা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি।”
তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান।
বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দীন গোলাপ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত সংগঠন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। গুটি কয়েক কর্মকর্তা ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছেন।”
গত দুই থেকে আড়াইমাস ধরে তাদের সংগঠন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বলে দাবি করেন গোলাপ।
তিনি বলেন, “তারা সেখানে অংশগ্রহণ না করে আজ হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই অনুমোদনহীন সংগঠনের ব্যানার নিয়ে আমাদের আন্দোলন স্থলে আসেন। তখন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়া মাত্রই আকস্মিক হামলা চালালে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়।”
পাল্টা অভিযোগ করে গোলাপ বলেন, “তারা হামলা চালিয়ে এখন আমাদের নেতাকর্মী ও সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। এর সঠিক বিচার আমরা চাই।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় যে বা যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে। তদন্ত অনুযায়ী এর সঠিক বিচার হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হোক, এটা আমরা কখনো হতে দিব না।”
মহানগর পুলিশের বন্দর থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, “বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, এ ঘটনার পর ক্যাম্পাসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠনের সব ধরনের কর্মসূচি পালনে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম স্বাক্ষরিতে এক নোটিসে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচ তলায় কর্মকর্তাদের মধ্যে সংগঠিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে।
ক্যাম্পাসের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠনের ব্যানারে যে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
আব্দুল কাইউম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রাউন্ড ফ্লোরে কর্মসূচি পালন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“এছাড়া ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”